• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

পাঁচ সন্তানকে হত্যার পর মা নিজেই চাইলেন মৃত্যুদণ্ড


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩, ০৫:১২ পিএম
পাঁচ সন্তানকে হত্যার পর মা নিজেই চাইলেন মৃত্যুদণ্ড

পৃথিবীতে মায়ের মতো আপন কেউ নেই। সেই মা কি-না হত্যা করলেন নিজের পাঁচ সন্তানকে! সন্তান হত্যার দায়ে তাকে যাবজ্জীন কারাদণ্ড দিয়েছিল আদালত। ১৬ বছর পর ঠিক হত্যাকাণ্ডের দিনটিতেই তিনি আদালতের কাছে মৃত্যুদণ্ডের অনুরোধ জানিয়েছেন। আদালত অনুরোধ আমলে নিয়ে তাকে “যন্ত্রণামুক্ত” মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে বেলজিয়ামে। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনেভিয়েভ লেরমিত নামের ওই নারী ২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ছুরি দিয়ে তার এক ছেলে ও চার মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করেন। তাদের বয়স ছিল ৩ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। এরপর তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে জরুরি সেবা বিভাগকে ফোন দেন।

২০০৭ সালের ওই হত্যাকাণ্ড এবং বিচার কার্যক্রম বেলজিয়ামজুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। জেনেভিয়েভে লেরমিতকে ২০০৮ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। পরে ২০১৯ সালে তাকে মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বেলজিয়ামের আইন অনুযায়ী, যেসব মানুষ অসহনীয় রকমের মানসিক কিংবা শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগছেন এবং যারা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত তারা চাইলে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে পারবেন। তবে খুব সচেতনভাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। শুধু তাই নয়, কেন এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তার যৌক্তিক কারণগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে বলার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে। সাধারণত প্রাণঘাতী ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে “যন্ত্রণামুক্ত” মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

লেরমিতের আইনজীবী নিকোলাস কোহেন বলেন, “তার মক্কেল যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এর জন্য তার মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে।”

দেশটির মনোবিজ্ঞানী এমিলি মারোইট স্থানীয় একটি টেলিভিশনকে বলেছেন, লেরমিত সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীকী হিসেবেই ২৮ দিনটিকে মৃত্যুর জন্য বেছে নিয়েছিলেন।

বিচার চলাকালীন লেরমিতের আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়েছিলেন, তাদের মক্কেল মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তাকে কারাগারে না পাঠানোর আবেদন জানিয়েছিলেন তারা। তিনি নিয়মিত মনোরোগবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতেন বলে আদালতের কাছে জানান তারা।
তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের শুনানি নেওয়ার পর আদালত লেরমিতকে তার সন্তানদের পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। তখন তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

২০১০ সালে লেরমিতে একজন প্রাক্তন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে তিন মিলিয়ন ইউরো দাবি করে একটি দেওয়ানি মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তার (মনোরোগ বিশেষজ্ঞের) “নিষ্ক্রিয়তা” এই হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও তিনি ১০ বছর পর সে মামল তুলে নেন।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে বেলজিয়ামে প্রায় দুই হাজার ৯৬৬ জন মানুষ যন্ত্রণাহীনভাবে মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন। যা ২০২১ সালের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। এর পেছনে ক্যান্সারকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, মৃত্যু চাওয়া প্রতি চারটি অনুরোধের মধ্যে প্রায় তিনটিতেই এসব মানুষ “শারীরিক এবং মানসিক উভয় ধরনের যন্ত্রণা” ভোগের কথা জানিয়েছেন। এদিকে ২০১৪ সাল থেকে বেলজিয়াম যেসব শিশু দীর্ঘস্থায়ীভাবে অসুস্থ এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণায় থাকে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি তাদেরও স্বেচ্ছায় মৃত্যু গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে তাদের পিতা-মাতার সম্মতির প্রয়োজন পড়ে।

Link copied!