২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারসহ চারটি স্থাপনায় একযোগে বিমান হামলা চালায় নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদা। একে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেবল যুক্তরাষ্ট্রই নয়, গোটা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়ায় টুইন টাওয়ার হামলার ভয়াবহতা।
হামলার পরিকল্পনাকারী
উগ্র ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা আফগানিস্তান থেকে এ হামলার পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছিল। আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন ও কমান্ডার খালিদ শেখ মোহাম্মদ ছিলেন এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী।
মোট ১৯ জন ছিনতাইকারী পাঁচজনের তিনটি ও চারজনের একটি দলে বিভক্ত হয়ে বিমান ছিনতাই করে হামলা চালায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার তথা টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে। তবে পেনসিলভানিয়ায় বিধ্বস্ত বিমানটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
হামলা পরিচালিত হলো যেভাবে
১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার পর যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই ক্যালিফোর্নিয়াগামী চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার সদস্যরা।
সন্ত্রাসীদের চারটি দলেই একজন বিমান চালানোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিনতাইকারী ছিল। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের চারটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় একযোগে বিমানগুলো নিয়ে হামলা চালায় আল-কায়েদা।
সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে প্রথম বিমানটি আঘাত হানে ম্যানহাটনের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারে। ১৭ মিনিট পর দ্বিতীয় বিমানটি নিয়ে জঙ্গিরা হামলা চালায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের আরেকটি ভবন সাউথ টাওয়ারে। দেড় ঘণ্টার মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়ে ধসে পড়ে টুইন টাওয়ারের ভবন দুটো।
তৃতীয় ফ্লাইটটি ডুলস বিমানবন্দর থেকে ওড়ার পর ওহাইওতে ছিনতাই হয়। সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে এটি ভার্জিনিয়ায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তর পেন্টাগনের পশ্চিম দিকে আঘাত হানে।
এরপর চতুর্থ বিমানটি রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির দিকে যাওয়ার পথে সকাল ১০টায় পেনসিলভেনিয়ার কাছে একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়। বিমানের যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে বিমানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করলে হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। যদিও প্রাণে বাঁচতে পারেননি বিমানের কোনো যাত্রী।
ধারণা করা হয়, আল-কায়েদার শেষ লক্ষ্যবস্তু ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউস কিংবা পার্লামেন্টের ক্যাপিটল হিল ভবন।
হামলার ক্ষয়ক্ষতি
বিবিসির তথ্যমতে, ১৯ হামলাকারীর সঙ্গে এ হামলায় প্রাণ হারায় ২ হাজার ৯৭৭ জন। নিহতদের বেশির ভাগই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাসিন্দা।
চার বিমানের ২৪৬ জন যাত্রী ও সব ক্রু নিহত হন। কেবল টুইন টাওয়ারের দুই ভবনে মারা যান ২ হাজার ৬০৬ জন। পেন্টাগনের হামলায় প্রাণ হারান ১২৫ জন। হতাহতের মধ্যে ৭৭টি দেশের নাগরিক ছিলেন।
হামলা-পরবর্তী পদক্ষেপ
নাইন ইলেভেন হামলার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে আল-কায়েদাকে নিশ্চিহ্ন করতে ও ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট। শুরু হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান ‘ওয়ার অন টেরর’।
অভিযান শুরুর প্রায় ১০ বছর পর ২০১১ সালে পাকিস্তানে অভিযান চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন সেনারা। নাইন ইলেভেন হামলার আরেক পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মোহাম্মদকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রায় ২০ বছরের সামরিক অভিযান শেষে পর আফগানিস্তান ছাড়ছে মার্কিন সেনারা। তবে নতুন করে তালেবানের উত্থানে আবারও অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।