• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বরষার প্রথম দিনে


আরাফাত শান্ত
প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩, ০৯:৩৫ এএম
বরষার প্রথম দিনে

হুমায়ূন আহমেদের অনেক জিনিসকেই আমরা সেলিব্রেট করি না। যেমন গীতিকার না হয়েও ওনার গান লেখার ‘ক্যাপাসিটি’। সহজ কথায় তিনি সুন্দর গান লিখতে পারতেন। তার গানের কথায় ভণিতা নেই। আমাদের রেডিও আর সিনেমায় গানের যে ধারা তা তিনি ধরতে পেরেছিলেন। এমনিতে তিনি ফোক পাগল মানুষ। ভাটি অঞ্চলের ফোক গান তাকে রবীন্দ্রসংগীতের মতোই আকৃষ্ট করেছিল। তার একটা বিখ্যাত গান আছে, ‘চাঁদনী পসর রাইতে কে আমায় স্মরণ করে।’ ‘চন্দ্রকথা’ সিনেমায় কিন্তু এটা থাকার কথা ছিল না। কথা ছিল গান যাবে, ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়’। পরে কী মনে করে মকসুদ জামিল মিন্টুকে গানটা লিখে পাঠান। মকসুদ জামিল মিন্টু যখন রেকর্ড করে হুমায়ূনকে শোনান, হুমায়ূন আহমেদ হু হু করে নাকি কাঁদেন। আবার ‘এক যে ছিল সোনার কন্যা’ এইটা তিনি ময়মনসিংহ গীতিকা থেকে ইনস্পায়ার্ড হয়ে লেখেন। মকসুদ জামিল মিন্টুকে দেন সুর করতে। মিন্টুর মনে ছিল না। কিন্তু স্টুডিও তো রেকর্ডিংয়ের জন্য আগেই বুকিং নেওয়া। তখন সুবীর নন্দীকে বসিয়ে পড়তে পড়তে তিনি সুরটা করেন। ‘বেহুলা’ থেকে শুরু করে এ দেশে গ্রামীণ আঙ্গিকে কত শত ছবি হয়েছে, কিন্তু এ গানটায় একটা মর্ডানিটি আছে, যা মানুষকে স্পর্শ করে আজও।

কিন্তু আজকে আমি বলব আমার সবচেয়ে প্রিয় গানের গল্প—‘বরষার প্রথম দিনে’। গানটা অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। এত সুন্দর বৃষ্টির গান রবীন্দ্রসংগীতের পর খুব কমই আছে। গানটা মোটেও হুমায়ূন আহমেদ ধরনের গান না। মকসুদ জামিল মিন্টুকে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি তো আগে ওয়েস্টার্ন মিউজিক টিউজিক করতেন, দেখেন গিটার টিটার দিয়ে একটা গান বানান।’ মকসুদ জামিল মিন্টু অসাধারণ সুর করেছেন। গানটা শুনতে সহজ লাগলেও সহজ না। শুরুতে এক সুর অন্তরায় আরেক সুর। সাবিনা ইয়াসমীন গানটা গেয়েছেনও দারুণ। এই গানের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। গানটা পরে হুমায়ূন আহমেদ আরও কয়েকটা নাটকে ব্যবহার করেছিলেন। তবে মজা হয় প্রথম সিনেমায় ব্যবহার করতে গিয়ে। সচরাচর হুমায়ূন আহমেদ ছবিতে কোরিওগ্রাফার রাখতেন না। এখন এটার চিত্রায়ন করতে গিয়ে নায়িকা শাওনের হলো বিপদ। শাওন ও মাহফুজ প্রেমিক প্রেমিকার খুনসুটি করবে। তখন দেখা গেল মাহফুজ আহমেদ খুব ভালো রোমান্টিক এক্সপ্রেশন দিচ্ছে, শাওন নার্ভাস। এদিকে আবার কোনো স্টোরিবোর্ড নেই, হুমায়ূন আহমেদের যখন যেটা মাথায় আসছে, সেভাবেই কাজ হচ্ছে। মোটামুটি সবার জন্যই ছিল খুব ক্লান্তিকর জার্নি। কিন্তু গানটা সফল, আজকেও আষাঢ়ের প্রথম দিনে দেখলাম অনেককে শেয়ার করতে।

আমাদের বেশির ভাগ প্রেমের গানই তো দুঃখের মেলোডি। এই গানটা আনন্দের, পজিটিভিটির। প্রেমে পড়লে মানুষের সব ভালো লাগা শুরু করে এই বিশুদ্ধ আবেগের গল্পই এ গানে। যত দিন বাংলাদেশে আষাঢ় মাস আসবে তত দিন এ গানটা থেকে যাবে।

Link copied!