অভিনেত্রী তাজিন আহমেদের কথা আজ মনে এলো। মৃত্যুবার্ষিকী বলেই হয়তো। তার অকালে চলে যাওয়াটা খুবই অবাক হবার মতো ব্যাপার। একা উত্তরার এক বাসায় থাকতেন। যে কেয়ারটেকার মেকআপ আর্টিস্ট ছিলেন, তিনিই ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পাশে ছিল না কোনো স্বজন অথবা বন্ধু। চলে যাওয়ার খবর পেয়ে সবাই ছুটে আসেন অনেকে। নাট্যাঙ্গনের লোকজনদের সহায়তায় এই গুণী শিল্পীর শেষ বিদায়ের আয়োজন করা হয়।
এই শোবিজ মিডিয়া বড় নিষ্ঠুর। একটু কাজ কমিয়ে দিলে সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে দর্শক শ্রোতা কেউই মনে রাখে না। আড়ালে কেউ চলে গেলে তাকে আরও আড়াল করাই যেন নিয়তি। অথচ দিলার জলি ও কামাল আহমেদের ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন এক উজ্জ্বল কন্যা, নাম রাখা হলো ‘জল’। বড় হয়ে এই মেয়েটাই হয়ে উঠলো প্রিয়দর্শিনী অভিনেত্রী। জলের মতই স্বচ্ছ এক মানুষ ছিলেন তাজিন আহমেদ। চিন্তা চেতনা, অভিনয়, কথা বলা, বন্ধুত্ব সবকিছুতেই তিনি স্বচ্ছ। তার অভিনয়ের প্রধান শক্তি ছিল ন্যাচারাল স্বতঃস্ফূর্ততা।
১৯৯৬ সালে দিলারা জলির লেখা ও শেখ নিয়ামত আলীর পরিচালিত নাটকেই তার যাত্রা শুরু অভিনয়ে। তারপর ১৫ বছর তিনি কাজ করেছেন অবিরাম। টানা অনেক বছর এনটিভিতে উপস্থাপনা করেছেন ‘টিফিনের ফাঁকে’। স্কুলের বাচ্চাদের বিভিন্ন কথায় মৃদু একটা হাসি দিতেন। কী যে মিস্টি সেই হাসি। ডজন খানেকের ওপর নাটক লিখেছেন তিনি। একটা দৈনিকের সাংবাদিক ছিলেন। গণসংযোগ কর্মকর্তার হিসেবেও কাজ করেছেন। থিয়েটারেও ছিলেন সিরিয়াস সংগঠক। একজন পুরোদস্তুর নাট্যব্যক্তিত্ব হতে যা যা করা দরকার সব কিছুই করেছেন।
তবে দর্শক মনে রাখবে অভিনেত্রী তাজিন আহমেদকেই। একটা সময় বিটিভির সাপ্তাহিক নাটক মানেই তাজিন আহমেদ। শামস সুমন, টনি ডায়েস, মীর সাব্বির, নাজিম জয়, জাহিদ হাসানদের সঙ্গে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। তার হাসির মতোই সাবলীল ছিল তার অভিনয়। ২০১০ সালের পর থেকে অভিনয় কমিয়ে ফেলেন। তাও তখন এক বেসরকারি রেডিওতে কথা বন্ধু হিসাবে ছিলেন, টুকটাক উপস্থাপনা করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে টানাপোড়েন ও তার মায়ের হুট করে এক মামলায় জেলে যাওয়ার পর থেকে নিজেকে আরও সরিয়ে নেন। একাকি থাকার কারণেই হয়তো একদিন ২০১৮ সালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই চলে যান।
চলে গেলেও তিনি আমাদের মাঝেই থাকবেন জোৎস্না হয়ে। শামসু সুমনের সঙ্গে তার একটা একক নাটকের ডায়লগ মনে পড়লো আজ, ‘মনে রেখেছি বলেই মনে থাকবে।’ তাজিন আহমেদকে আমরাও মনে রাখবো।
আপনার মতামত লিখুন :