• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২৬ সফর ১৪৪৬

নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে সেই দিন কেঁদেছিলেন মিলনায়তনের সবাই


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম
নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে সেই দিন কেঁদেছিলেন মিলনায়তনের সবাই
নায়ক রাজ্জাক

১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার ৮ নম্বর নাকতলা রোডের বাড়িতে জন্ম নায়ক রাজ্জাকের। ১৯৬৪ সালে আসেন ঢাকায়। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে ‘নায়করাজ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। আজ ২১ আগস্ট নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুদিন। এই দিনে স্মরণ করি রাজ্জাকের জীবনের সত্যিকার গল্প।

কপর্দকহীন হয়ে ঢাকা এসে স্টেডিয়াম এলাকার একটি ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে শুরু। নানা সময়ের সাক্ষাৎকারে রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, একটা সময় ফার্মগেট এলাকায় থিতু হয়েছিলেন দুই বাচ্চা আর স্ত্রী লক্ষ্মীকে নিয়ে। তখন জীবিকা নির্বাহের জন্য টিভি নাটকে অভিনয় করতেন। নাটকে অভিনয় করে সপ্তাহে পেতেন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। মাসের খরচ ৬০০ টাকা। রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘অল্প আয়ে সংসারের খরচ চলে না। বাচ্চাদের দুধ জোগাড় করতেই সব টাকা ব্যয় হয়ে যেত। ওই সময় স্বামী-স্ত্রী দুজন মাঝেমধ্যে উপোসও করতাম। পয়সার অভাবে ফার্মগেট থেকে ডিআইটি টিভি কেন্দ্রে হেঁটে যাতায়াত করতাম।’

২০১৬ সালে এফডিসিতে এসেছিলেন রাজ্জাক। সেদিন ছিল তার জন্মদিন উদ্‌যাপনের আয়োজন। অনেক কথা বলেছিলেন সেদিন। অকপটে জানিয়েছিলেন নিজের এক জীবনের কথা। সেদিন রাজ্জাক ঠিক এ কথাই বলেছিলেন, ‘সকলের ভালোবাসা পেয়ে আজ আমি পরিপূর্ণ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনেক সময় অর্ধাহারে দিন কেটেছে আমার। সপ্তাহে ৬৫ টাকা পেতাম টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠান করে, সেই ৬৫ টাকা দিয়ে আমার সংসার চলেছে। একটা সময় পর আমি “বেহুলা”র নায়ক হলাম। ৫০০ টাকা সাইনিং মানি নিয়ে খুশিতে বাড়ি এলাম। তারপরের কাহিনিটা অনেকেই জানেন।’ সেদিন কথা বলার এক ফাঁকে বারবার কেঁদেছিলেন তিনি। অশ্রুসিক্ত রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘আজকে আমি এই যে নায়করাজ, এটা আমার একার পক্ষে সম্ভব হয়নি।...আমার যাঁরা শ্রদ্ধেয় পরিচালক ছিলেন, তাঁরা আমাকে এবং তিনজন নায়িকা নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। সেই যুদ্ধে আমি একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করেছি তাঁদের সঙ্গে। শুধু রোববার দিন বাড়ি যেতাম আমি, অন্য দিনগুলোয় মেকআপ রুমের ফ্লোরে শুয়ে থাকতাম।’ তার সঙ্গে সেদিন মিলনায়তনের উপস্থিত অনেকেই কেঁদেছিলেন।

রাজ্জাক শুধু নায়ক হিসেবেই নয়, পরিচালক হিসেবেও বেশ সফল। ‘আয়না কাহিনী’সহ কয়েকটি ছবিটি নির্মাণ করেন তিনি।

১৯৬৫ সাল, ‘আখেরি স্টেশন’ ছবিতে সহকারী স্টেশনমাস্টারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ঢাকার ছবিতে ওটিই রাজ্জাকের প্রথম অভিনয়। এরপর আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেন। যেমন ‘কার বউ’ ছবিতে অটোরিকশাচালক (বেবিট্যাক্সি ড্রাইভার), ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’-এ পাড়ার ছেলে মিন্টু, ‘ডাকবাবু’তে আদালতের কর্মচারী, ‘কাগজের নৌকা’য় বাইজিবাড়ির মাতাল। একসময় পরিচয় হয় জহির রায়হানের সঙ্গে। তিনি রাজ্জাককে ‘বেহুলা’ ছবিতে নেন। ওই ছবি সাইনিং মানি হিসেবে ৫০০ টাকা নগদ পেয়েছিলেন। সেই টাকার কিছু অংশ সংসারের কাজে খরচ হয়। বাকি টাকা বন্ধুবান্ধবকে মিষ্টি খাইয়ে শেষ করেন রাজ্জাক।

‘বেহুলা’ ছবিটি করার পর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রাজ্জাক। এক্সট্রার ভূমিকায়, আউট অব ফোকাসে অখ্যাত-অগুরুত্বপূর্ণ চরিত্র করেও একসময় হিরো হয়ে ওঠা যায়! রাজ্জাক প্রমাণ করে দিয়েছিলেন।

বিনোদন বিভাগের আরো খবর

Link copied!