১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তানে প্রথম গান লিখে ৫০ টাকা আয় করেছিলেন কিংবদন্তী গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। এর পর একে একে রচনা করেছেন ২০ হাজারের বেশি গান। দীর্ঘ ছয় দশক ধরে বেতার, টেলিভিশন ও সিনেমাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছিল তার সফল পদচারণা।
বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের তালিকায় তিনটি গানেই এই গীতিকবির রচিত। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল’ ও ‘একবার যেতে দে না’ – কালজয়ী এই গান তিনটিতে মিশে আছে মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, আর বাঙ্গালির জাতীয়তাবাদ।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তালেশ্বর গ্রামে ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এই গুণী শিল্পী। ১৯৬২ সালে মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় প্রথম গান লিখেছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ‘বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে’ গানটির সুর করেছিলেন নাজমূল হুদা বাচ্চু। কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন।
১৯৬৫ সালে চলচ্চিত্রে যুক্ত হওয়ার পর একাধারে চিত্রনাট্য, গান, সংলাপ ও কাহিনি রচনা করে যান গাজী মাজহারুল আনোয়ার। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সূচনালগ্ন থেকেই রয়েছে তার নানা অবদান।
তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দেশ চিত্রকথা থেকে তিনি ‘শাস্তি’, ‘স্বাধীন’, ‘শর্ত’, ‘সমর’, ‘শ্রদ্ধা’, ‘ক্ষুধা’, ‘স্নেহ’, ‘তপস্যা’, ‘উল্কা’, ‘আম্মা’, ‘পাষাণের প্রেম’, ‘এই যে দুনিয়া’ সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন।
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘চলে আমার সাইকেল হাওয়ার বেগে’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’ ইত্যাদি।
সঙ্গীতশিল্পে অবদানের জন্য ২০০২ সালে একুশে পদক লাভ করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। এছাড়া পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, এস এম সুলতান স্মৃতি পদক, একাধিকবার বাচসাস পদক এবং ২০০২ সালে একুশে পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেছেন তিনি।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।