ভোলায় শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন রং তুলির কাজ চলছে। পূজা ঘনিয়ে আসায় রাত দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা কারিগর ও পূজা কমিটির সদস্যরা। এবার জেলায় ১১৬টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ঘুরে জানা গেছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজার আর মাত্র দুইদিন বাকি। ১১ অক্টোবর সন্ধ্যায় বেলতলায় দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে ৫ দিনব্যাপী এ উৎসব। তাই পূজা মণ্ডপগুলোতে চলছে প্রতিমা তৈরি আর সাজসজ্জার কাজ। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে প্রতিমা বানানোর কাজ শেষ। এখন রঙ তুলির আঁচড়ে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিমার কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেবী দুর্গার সঙ্গে রং তুলিতে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী দেবীকেও। গত বছরের করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে এ বছর প্রতিমার দাম ভালো পাওয়ায় খুশি মৃৎ শিল্পীরা।
ফরিদপুর রাজবাড়ী থেকে আসা মৃৎ শিল্পী খোকন পাল জানান, তিনি এ বছর ভোলায় ১০টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। রং, মাটি ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পেলেও প্রতিমার দাম ভালো পাওয়ায় তারা পুষিয়ে নিতে পেরেছেন।
এদিকে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে মণ্ডপগুলোতে চলছে বাহারি সাজ-সজ্জার কাজ। করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় মণ্ডপে আগতদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আয়োজক কমিটিগুলো। বিগত বছরের তুলনায় ব্যয় ভার বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
ভোলা শহরের ওয়েস্টার্ন পাড়া মিহির লাল সাহার মাঠ দুর্গা পূজা মণ্ডপের সহসভাপতি গোপাল সাহা জানান, বিগত দিনের তুলনায় এ বছর প্রতিমা তৈরি ও সাজ-সজ্জা ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু করোনার কারণে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়ি থেকে চাঁদা কালেকশন কম হচ্ছে। তাই সরকারি সহযোগিতা বৃদ্ধি না করা হলে পূজা পরিচালনা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
ওয়েস্টার্ন পাড়া শতদল বিকাশ ক্লাব মাঠ দুর্গা পূজা মণ্ডপের সাধারণ সম্পাদক শান্ত ঘোষ ও অন্যতম সদস্য রাজন সাহা জানান, তাদের পূজামণ্ডপের সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এ বছর তাদের বাজেট ১১ লাখ টাকা। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পূজা চলাকালীন মণ্ডপে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হবে বলেও জানান তারা।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রণয় কুমার সাহা জানান, ভোলায় এ বছর ১১৬টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ভোলা সদরে ২৭টি, বোরহানউদ্দিনে ২০টি, দৌলতখানে ৮টি, তজুমদ্দিনে ১৫টি, লালমোহনে ২২টি, মনপুরায় ১০টি ও চরফ্যাশনে ১৪টি।
ভোলা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার সাহা জানান, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা ও সকল ধর্মের মানুষদের উপস্থিতিতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভোলায় বহুদিন ধরে সার্বজনীন দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় পূজা অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাপ্তি হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ভোলা জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সাদা পোশাকে নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন পূজা মণ্ডপসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিশেষ নজরদারী রাখবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া থাকছে র্যাবের বাড়তি টহল। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে সহযোগিতা দেবে আনসার-ভিডিপি।