কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট খ্রিষ্টান হাসপাতালের সামান্য উত্তরে রিংভং হাসিনাপাড়ায় বন বিভাগের খাস জায়গায় গড়ে উঠেছে জনবসতি। সেখানেই ২৮ জানুয়ারি বার্ধক্যের কারণে মারা যান সুরেশ চন্দ্র শীল। হিন্দুধর্মের সব নিয়ম মেনেই তাকে সৎকার করা হয় এবং সৎকার-পরবর্তী সব নিয়ম পালন করতে শুরু করেন সুরেশ চন্দ্র শীলের ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে।
মৃত্যুর ১১ দিন পর হবে বাবার শ্রাদ্ধ। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ভোরে আট ভাইবোন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বসে কিছু আনুষ্ঠানিকতা করছিল। ঠিক তখনই তাদের চাপা দেয় বেপরোয়া একটি গাড়ি। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় চার ভাইয়ের।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত অপর দুই ভাই ও দুই বোনকে উদ্ধার করে নিকটস্থ খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে বেলা ১২টার দিকে আরও এক ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
তাদের লাশ আনা হয়েছে বাড়ির উঠানে। আর তা দেখে শোকে পাথর হয়ে যান ১১ দিন আগে স্বামী হারানো মানু বালা শীল (৬০)।
সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানে সারি করে রাখা অনুপম শীল (৪৮), নিরুপম শীল (৪৫), দীপক শীল (৪০), চম্পক শীল (৩৮) ও স্মরণ শীলের (৪৬) লাশ। পাশে তাদের স্ত্রীরা বিলাপ করছিলেন। তাদের সন্তানরা কাঁদছে। এ সময় প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি মুসলিমরাও এসেছেন। সুরেশ চন্দ্র শীলের পাঁচ ছেলের একসঙ্গে এমন মৃত্যুতে হতবিহ্বল সবাই। এসবের মধ্যেই যেন ‘পাথর’ হয়ে বসে আছেন মানু বালা। চোখে পানি নেই। কোনো কথা বলছেন না, নড়াচড়াও করছেন না। এতটাই শোকাহত যে কান্না করতেও ভুলে গেছেন তিনি।
বিলাপ করতে করতে নিহত অনুপম শীলের স্ত্রী পপি শীল বলেন, ‘আজ আমার শ্বশুরের শ্রাদ্ধ হওয়ার কথা। খাবারের ব্যবস্থা, প্যান্ডেল করা, অতিথি নিমন্ত্রণ থেকে শুরু করে সব কাজ হয়ে গেছে। কিন্তু সেই শ্রাদ্ধের আগে সব শেষ হয়ে গেল। ছোট ছেলেমেয়েরা এখন পথে বসবে।
এদিকে পাঁচ ভাই একসঙ্গে নিহত হওয়ার খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান ও ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর। তারা শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন।
ইউএনও জেপি দেওয়ান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব না এখন।’
মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেফায়েত হোসেন ও চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওসমান গণি জানান, পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ সৎকারের প্রক্রিয়া চলছে। তাদের চাপা দেওয়া গাড়ি ও ড্রাইভার-হেলপারকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
তবে পুলিশ বলছে, চাপা দিয়ে চলে যাওয়া গাড়িটি বাস, ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি নাকি অন্য কিছু তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।