লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জে পাওনা টাকা চাওয়ায় মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে আনোয়ারুল ইসলাম (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে নবনির্বাচিত এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
টানা ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বুধবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনোয়ারুলের মৃত্যু হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে বিচারের দাবিতে মরদেহ নিয়েই মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা।
নিহত আনোয়ারুল জেলার আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে।
অভিযুক্তের নাম মোজাম্মেল হক। তিনি কালীগঞ্জের চলবলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনের সময় মোজ্জাম্মেল হককে দেড় লাখ টাকা ধার দেন আনোয়ারুল। নির্বাচনের পর সেই টাকা পরিশোধ করতে চাপ দেন তিনি। কিন্তু টাকা না দিয়ে আনোয়ারুলকে ভয়ভীতি দেখান মোজাম্মেল। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য হয়।
এদিকে ৪ জানুয়ারি টাকা দেওয়ার কথা বলে আনোয়ারুলকে নিজ বাড়িতে ডেকে নেন মোজাম্মেল। এরপর নিজের টর্চার সেলে আটকে রেখে দুই দিন অমানুষিক নির্যাতন করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে ইউপি সদস্যের বাড়িতে আনোয়ারুলকে উদ্ধার করতে গিয়ে ধরা পড়েন তার প্রতিবেশী রোকনুজ্জামান। তার ওপরও অমানুষিক নির্যাতন চলে। পরে ৬ জানুয়ারি আনোয়ারুলের পরিবারের সদস্যরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ মোজাম্মেলের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালায়। এ সময় আনোয়ারুলের মোটরসাইকেল উদ্ধার করে তারা।
একপর্যায়ে মুমূর্ষু আনোয়ারুল ও রোকনুজ্জামানকে স্থানীয় তেঁতুলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ফেলে পালিয়ে যান মোজাম্মেল ও তার সহযোগীরা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। আহত আনোয়ারুলের মাথাসহ সারা শরীরে অসংখ্য লোহার পেরেক লাগানো ছিল। মৃত্যুর আগে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে পুলিশের কাছে নিজের ওপর হওয়া অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন আনোয়ারুল।
এ ঘটনায় আনোয়ারুলের স্ত্রী বাদী হয়ে মোজাম্মেল, তার ছোট ভাই মোশারাফ হোসেন ভুট্টু, ছেলে সুজনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় ১১ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন মোজাম্মেল ও তার ছোট ভাই। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে আনোয়ারুলের মরদেহ নামুড়ি বাজারে পৌঁছলে হাজার হাজার জনতা মরদেহ মহাসড়কে রেখে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। মহাসড়ক অবরোধ করায় জনগুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে আদিতমারী থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।