• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ভরা মৌসুমে ৫০ শতাংশ ছাড়েও পর্যটক শূন্য কক্সবাজার


কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২৩, ০৯:৫০ পিএম
ভরা মৌসুমে ৫০ শতাংশ ছাড়েও পর্যটক শূন্য কক্সবাজার
পর্যটক শূন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটন খাতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর হরতাল-অবরোধের কারণে এই খাতে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দেশে সাধারণত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কে পর্যটন মৌসুম ধরা হয়। এই হিসেবে এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। অথচ সবকটি পর্যটন কেন্দ্র ফাঁকা। হরতাল-অবরোধে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকছে সপ্তাহের বেশিরভাগ সময়। এ ছাড়া সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রেন ও দূরপাল্লার বাসে আগুন দেওয়ার পর অনেক পর্যটকই নির্ধারিত ভ্রমণ বাতিল করছেন। এ অবস্থায় বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খাঁ খাঁ করছে।

খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবি, চলমান সংকটের সমাধান না হলে পর্যটনসহ সব খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মধ্যেই মৌসুমের দুইটি মাস শেষ হচ্ছে। গেল দুই মাসে কোনো ব্যবসা না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমল, বার্মিজ মার্কেট, শুটকি মার্কেট, যানবাহন, শামুক ও ঝিনুক মার্কেট, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা
ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, “করোনার ব্যবসায়িক ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই হরতাল-অবরোধের কারণে এই খাতের মরণদশা। মানুষ ঘুরতে যায় আনন্দ করতে, কেউই চাইবে না কোনো ধরনের আতঙ্কের মধ্যে থাকতে। ফলে যেসব পর্যটন কেন্দ্রে মানুষ সবচেয়ে বেশি ঘুরতে যায়, সেসব পর্যটন কেন্দ্র এখন একেবারেই খালি। বিমানে কিছু পর্যটক আসা-যাওয়া করলেও তা উল্লেখ করার মতো নয়।”

তিনি বলেন, “হরতাল-অবরোধের কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে। কারণ, নভেম্বর প্রায় শেষ, ডিসেম্বরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে—এমন লক্ষণ আমরা দেখছি না। জানুয়ারিতে নির্বাচন। ফলে মৌসুমের চার মাসের মধ্যে তিন মাস কোনো ব্যবসা হবে না। আর ফেব্রুয়ারিতে ব্যবসা করে খরচও ওঠানো যাবে না। কারণ, সারা বছরের ব্যবসা হয় এই চার মাসে।”

ঢাকার মালিবাগের বাসিন্দা ব্যবসায়ী নসরুল হামিদ এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, গত ৪ ও ৫ নভেম্বর সপরিবারে কক্সবাজার যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য তিনি কক্সবাজারের একটি পাঁচতারকা হোটেলে তিনটি রুম বুকিং করেন। পরে ওই দুইদিন হরতাল-অবরোধের কারণে কক্সবাজারে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন। এতে হোটেল কর্তৃপক্ষ একদিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন অপর দিকে ওই ব্যবসায়ী তার ভ্রমণ বাতিল করে চলে যান সপরিবারে নেপাল। এভাবে অনেক পর্যটক শুষ্ক মৌসুমে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পট না এসে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কলাতলী হোটেল মোটেল জোনের সভাপতি মুকিমখাঁন।

দেশের আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলসহ প্রায় সবকটিই এখন পর্যটকশূন্য।

বান্দরবানের একটি অভিজাত হোটেলের মালিক কিশলুর রহমান বলেন, “নভেম্বরে মাত্র দুজন পর্যটক রিসোর্টে তিন দিন ছিলেন। এ ছাড়া আর কোনো পর্যটক আসেননি। প্রায় ৩০ জন পর্যটক বিভিন্ন সময় রুম বুকিং দিয়েছিলেন। হরতাল-অবরোধের কারণে সব বুকিংই বাতিল হয়েছে।”

কক্সবাজারের তিন তারকা হোটেলের ম্যানেজার শামীম হাসান বলেন, অবরোধ-হরতালের কারণে কক্সবাজার পর্যটকশূন্য। বিমানে কিছু পর্যটক আসছেন, তাও একেবারে নগণ্য। তিনি বলেন, “হোটেলের রুম ভাড়াসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার পরও পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি অনেকে আগে থেকে ডিসেম্বরের জন্য রুম বুকিং দিলেও এখন তা বাতিল করছেন। বর্তমানে মাত্র ১০ শতাংশ রুম ভাড়া দেওয়া যাচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে অন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।”

কক্সবাজার হোটেল গ্র্যান্ড সেন্ডির মালিক আবদুর রহমান বলেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের আনাগোনা নেই।

বান্দরবানের পূরবী হোটেলের ম্যানেজার শিমুল দত্ত বলেন, পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি, নীলদিগন্ত, শৈলপ্রপাতসহ দর্শনীয় স্থানগুলো সবই ফাঁকা।

বান্দবানের ট্যুরিস্ট গাড়ি শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন ফোনে বলেন, তিন শতাধিক ট্যুরিস্ট গাড়ির পাঁচ শতাধিক শ্রমিক রয়েছেন। তারা পর্যটকের ওপর নির্ভরশীল। অবরোধে পর্যটক না আসায় চালক শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে ঠিকমতো খেতে পর্যন্ত পারছেন না। বান্দরবানে দীর্ঘদিন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ পাহাড়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় পর্যটনশিল্প মুখথুবড়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে না হতেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটকদের আনাগোনা আবার থমকে গেছে। ফলে এবারের মৌসুমে ব্যবসায়ীদের নিশ্চিতভাবেই অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১ হাজার ৪০০ পর্যটন স্থান রয়েছে। এর মধ্যে ২৮১টি স্থানে পর্যটকরা নিয়মিত যান। প্রতিবছর এসব পর্যটন কেন্দ্রে প্রায় দুই কোটি দেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাষ্টিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারের হোটেল মোটেল ও বিপণী বিতানসহ পর্যটন সেক্টরে গত দুই মাস ধরে দৈনিক ১৫/১৬ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

Link copied!