• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

খুলনার হাটে সুইজারল্যান্ডের ‘সম্রাট’


খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৩, ০৩:২০ পিএম
খুলনার হাটে সুইজারল্যান্ডের ‘সম্রাট’

কোরবানির ঈদ এলেই প্রতিবছর দেখা মেলে নানান জাতের, নানান রূপের ও বিভিন্ন আকৃতির গরুর। প্রতিবছর কোরবানির আগে খামারিদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে, কে কত বড় গরু হাটে তুলতে পারেন। অন্য বছরের মতো এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। খুলনা শহরে দেখা মিলেছে বিশালাকৃতির সুইজারল্যান্ডের রানীশংকর জাতের গরু ‘সম্রাট’।

সম্রাট সাদা, লালচে আর বাদামি রঙের মিশ্রণের বেশ মোটাতাজা গরু। তার ওজন প্রায় ৫৫ মণ। এর দাম হাঁকানো হয়েছে ১৮ লাখ টাকা। খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর পাবলা মোল্লা বাড়ির মোড়ের মধুমতি ডেইরি ফার্মে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রস্তুত করা হয়েছে সম্রাটসহ ১৫টি গরু। যার মধ্যে ৮টি বড় সাইজের গরু রয়েছে। সম্রাট ছাড়াও ডন, টাইটানিক, ট্রাম্প, জেমস, মাফিয়া ডন, নবাব ও বাদশা বাহারি নামের ৭টি গরু রয়েছে।

খামারের মালিক শামীম শেখ বলেন, খামারে ৭৫টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি কোরবানির ষাঁড় ও বাকিগুলো দুধ দেওয়া গরু। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু সম্রাটের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৮ লাখ টাকা এবং ট্রাম্পের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৬ লাখ। এ ছাড়া খামারে বড় আকারের আরও ৭টি গরু আছে। এগুলোর একেকটির ওজন ৮০০ থেকে ১২০০ কেজি।

সম্রাটের পরের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে ‘বড় দাদু’। ৩৫ মণ ওজনের এ গরুটিকে কোরবানির ঈদে বিক্রি করা হবে। মালিক এর দাম হাঁকছেন ১৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ১২ লাখ টাকা দাম বলেছেন ক্রেতারা। খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতী গ্রামে এক বছর ধরে পরম যত্নে ‘বড় দাদুকে’ লালন-পালন করছেন মাহবুব।

তিনি বলেন, “গরুটির বয়স চার বছর। এক বছর আগে গরুটি কিনে লালন-পালন করেছি। কোনো প্রকার বাজে খাবার খাওয়ানো হয়নি। ফ্রিজিয়ান জাতের হৃষ্টপুষ্ট ও সুস্থ গরুটি ৪ দাঁতের। এটির ওজন ৩৫ মণ। দাম চাচ্ছি ১৫ লাখ টাকা। কেউ কিনতে চাইলে দাম আলোচনা করে কমানো যাবে।”

এ ছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশনের ভেতরে সবচেয়ে বড় কোরবানির হাট জোড়াগেটে উঠেছে ২৭ মণ ওজনের একটি গরু। এটির দাম চাওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা। গরুটি যিনি কিনবেন, তাকে এ গরুর সঙ্গে ফ্রিতে একটি খাসিও দেওয়া হবে।

গরুর মালিক বাগেরহাটের পাথরখোলার মুরাদ হোসেন বলেন, “শাহিওয়াল জাতের গরুটি চার বছর আগে ৮৯ হাজার টাকায় কিনে লালন-পালন করি। গত বছর এ হাটে আনা হয়েছিল। তখন পাঁচ লাখ টাকা দাম চেয়েছিলাম। সাড়ে চার লাখ টাকা দাম ওঠে, কিন্তু বিক্রি করিনি। এবার আবার এ হাটে এনেছি। এবার দাম চাইছি ১০ লাখ।

জোড়াগেট কোরবানির হাটটি খুলনা সিটি করপোরেশন পরিচালনা করে। গত ২২ জুন থেকে হাটটি শুরু হয়েছে। ২৯ জুন সকাল পর্যন্ত এ হাটে কেনাবেচা চলবে। হাটে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ট্রাক, ট্রলি ও ট্রলারে গরু আসছে। জোড়াগেট মোড় থেকে ৬ নম্বর ঘাট পর্যন্ত হাটের বিস্তার ছড়িয়েছে।

এই হাটের সুপারভাইজার নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, “হাটে ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। জালনোট শনাক্তে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ব্যাংকের দপ্তরও খোলা হয়েছে। দেশীয় বিভিন্ন জাতের ছোট-বড় সব ধরনের গরুর জন্য হাটটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে ধনীরাও হাটটিতে একবার হলেও আসেন।”

কোরবানির পশুর কেনাবেচার জন্য প্রতিবছর নগরীর জোড়াগেট পাইকারি কাঁচা বাজারে পশুর হাট বসায় খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাট পরিচালনা করত। ২০০৯ সালে হাট থেকে কেসিসির আয় ছিল ৪৭ লাখ টাকা। ২০১১ সাল থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাট পরিচালনার উদ্যোগ নেয় সিটি কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে এ হাটের মাধ্যমে কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। ২০১১ সালে আয়ের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৭১ টাকা। বিক্রি হয়েছিল ৮ হাজার ৩৯৬টি পশু। ২০২২ সালে আয় হয়েছিল ২ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার ৭৪৫ টাকা।

Link copied!