• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

গল্পকথা পরিবারের ব্যতিক্রমী বইমেলা


লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম
গল্পকথা পরিবারের ব্যতিক্রমী বইমেলা

বই পড়ার প্রতি অগ্রহী গড়ে তুলতে ব্যতিক্রমী এক বইমেলার আয়োজন করেছে লালমনিরহাটের ঐতিহ্যবাহী গল্পকথা পরিবার। শহরের ভকেশনাল রোডের মৃধা বাড়িতে চলছে এই মেলা। মেলায় স্থানীয় আঞ্চলিক ও বরেণ্য কবি সাহিত্যিকদের লেখা প্রায় ৩ হাজার বই স্থান পেয়েছে।

শুক্রবার (১ মার্চ) থেকে শুরু হওয়া বইমেলা চলবে ১০দিন। মেলা প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

জানা গেছে, স্থানীয় আঞ্চলিক ও বরেণ্য কবি সাহিত্যিকদের পরিচিত করতে তাদের বই আগামী প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে ১০ দিনব্যাপী এ বইমেলার আয়োজন করেছে গল্পকথা পরিবার। আর এ মেলার উদ্বোধনী দিনেও ছিল ব্যতিক্রমী আয়োজন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোনো অতিথি ছিল না। পাঠক দর্শনার্থী আর মেলায় আগন্তুকরাই উদ্বোধক। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেরা ১১টায় উদ্বোধন করা হয় বইমেলার।

আয়োজকরা জানান, এ আয়োজন শুধু ১০ দিনেই নয়। বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে থাকবে এ বইমেলার আয়োজন।

সাহিত্য সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে, আগামী প্রজন্মকে মোবাইল গেম আসক্তি থেকে সরিয়ে বই ও ঐতিহ্যকে লালন করতে ব্যতিক্রমী এ বইমেলার পাশাপাশি আড্ডার আয়োজন করেছে গল্পকথা পরিবার। সেখানে গ্রামীন ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো মৃধাবাড়ি। সেখানে আগন্তুকরা ইট পাথরের শহরের মাঝে ফিরে পাবেন এক গ্রামীন শান্ত পরিবেশ। বিগত দিনের হারানো গ্রামীন সব আসবাবপত্রে সাজানো হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ।

আড্ডা দিতে আসাদের খাবারের জন্য একটি রেস্তোরাঁও রয়েছে এখানে। রেস্তোরাঁ মূলত আড্ডার ফাঁকে খাবারের জন্য এবং গল্পকথা দেখভাল করার সাপোর্ট স্টাফদের পারিশ্রমিক বাবদ ব্যয় হয় রেস্তোরাঁর অর্থ। এখানে আগাম মূল্য পরিশোধ খাবার সংগ্রহ করতে হয়। গ্রামের নারীরা তাদের রান্না করা খাবার এখানে প্রদর্শন করে বিক্রি করতে পারেন। গ্রামীন নারীদের রান্নার কাজকে উৎসাহিত করতে, নারী উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে এ সুযোগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ রেস্তোরাঁয় পার্টটাইম কাজের সুযোগও রয়েছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা নির্ধারীত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এখানে কাজ করতে পারেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো মৃধাবাড়িকে গ্রামীন পরিবেশে সাজানো হয়েছে। হারাতে বসা গ্রামীন সেই টং ও কুড়ে ঘর। রয়েছে বাঁশ-বেতের তৈরি বেড়া। আপ্যায়ণ করা হয় মাটির তৈরি সব তৈজসপত্রে। এখানে রয়েছে আঞ্চলিক ভাষা চর্চার ব্যবস্থা ও শান্ত পরিবেশে পছন্দের বই পড়ার সুযোগ। বই পড়ার জন্য লাইব্রেরিও রয়েছে এখানে। রয়েছে কবিতা আবৃতি ও আঞ্চলিক গান গজল পরিবেশনার ব্যবস্থাও। এসব পরিবেশনে কারো কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই। ইচ্ছে হলেই ডায়াসের সামনে গিয়ে যে কেউ পরিবেশন করতে পারবেন। তবে তা হতে হতে পরিচ্ছন্ন অঞ্চলিকতা ও ঐতিহ্যকে ঠিক রেখে। সব মিলে গ্রামীন এক মনোরম পরিবেশ। এখানে বসে মোবাইলে গেম খেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

কবি ও সমাজসেবক ফেরদৌসী বেগম বলেন, “বই পড়ে বা কিনে কেউ বিপথে যায়নি। বই আধুনিকতার নামে আমাদের প্রজন্ম খারাপ কাজে প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করে। আগামী প্রজন্মকে মোবাইল গেম থেকে সরিয়ে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করতে গল্পকথার বইমেলা অন্যতম ভূমিকা রাখবে। বর্তমান প্রজন্ম হারানোর দিনের অনেক ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে। তাদের কাছে সেই ঐতিহ্যকে পরিচয় করিয়ে দেবে গল্পকথা পরিবার।”

বই মেলার আয়োজক সংস্কৃতিকর্মী মুনিম হোসেন পথিক জানান, আগামী প্রজন্মকে মোবাইল গেমিং আসক্তি থেকে সরিয়ে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করতে গল্পকথা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জার্মান প্রবাসী মইনুল হক মৃধার পরিত্যক্ত পৈত্রিক মৃধাবাড়িটি নিয়ে গল্পকথা গড়ে তোলা হয়। হারাতে বসা গ্রামীন ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন তথা আগামী প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতে গ্রামীণ পরিবেশে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে আমাদের ছেলে মেয়েরা এসে গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। আড্ডার সঙ্গে লাইব্রেরির বইও পড়তে পারবে।”

পথিক আরও বলেন, লেখক, কবি ও সাহিত্যিকদের পরিচিত করতে এবং তাদের লেখা বই পাঠকদের হাতে তুলে দিতে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। বইমেলা প্রতিটি বিশেষ দিনে করা হবে। গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং বই পড়ায় আগ্রহ বাড়াতে অভিভাবকরা সন্তানদের গল্পকথার এই বইমেলায় নিয়ে আসবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Link copied!