• ঢাকা
  • রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৬ জ্বিলকদ ১৪৪৬

বৃষ্টিতে মাঠে পচছে ধান, বিপাকে কৃষক


নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৫, ০৯:৪৬ পিএম
বৃষ্টিতে মাঠে পচছে ধান, বিপাকে কৃষক

নওগাঁর মান্দায় গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে মাঠে পেকে থাকা বোরো ধান কাটতে পারছেন না কৃষকেরা। কোনো কোনো জমিতে ধান কাটলেও শুকাতে না পারায় তা আবার ভিজে যাচ্ছে। ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। আবহাওয়া খারাপ থাকায় ধান শুকানোর সুযোগ না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানিয়েছেন, আমন ধান কেটে নেওয়ার পর ওইসব জমিতে সরিষা ও আলুর আবাদ করা হয়েছিল। এ কারণে বোরো ধান রোপণ করতে কিছুটা দেরি হয়। জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই একটানা বৃষ্টিপাত চলছে। আবহাওয়া ভালো না থাকায় পাকা ধান কেটে তারা ঘরে তুলতে পারছেন না। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, শনিবার দুপুর পর্যন্ত ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত ৭ দিনে গড়ে প্রতিদিন বৃষ্টিপাত হয়েছে প্রায় ২০ মিলিমিটার। এ সময়ে সাধারণত আকাশ মেঘলা থাকলেও টানা বৃষ্টির নজির সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায়নি। এ বছরের চিত্র পুরোটাই উল্টো।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় আলু আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে এবং সরিষা হয়েছে ৫ হাজার ২০০ হেক্টরে। এসব জমিতে আলু ও সরিষা কেটে বোরো ধান রোপণ করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এই দেরির কারণে এখন ধান কাটার মৌসুম পড়েছে বৃষ্টির মধ্যে।

পশ্চিম নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল বলেন, “আমন ধান কাটার পর তিন বিঘা জমিতে আলুর চাষ করি। এরপর সেই জমিতে বোরো ধান লাগাই। পাকা ধান কেটে শুকানোর জন্য জমিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সেই ধান আর ঘরে তুলতে পারছি না। ক্ষেতেই ধান পচে যাচ্ছে। খুব বিপদে আছি।”

একই গ্রামের আরেক কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “সুযোগ বুঝে কিছু ধান কেটেছি, কিন্তু শুকাতে না পারায় ধান আবার ভিজে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত ৫-৬ দিনে একদিনও পুরো শুকনো দিন পাইনি।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কৃষক বলেন, “বোরো ধান রোপণের সময় আমি সার ও কীটনাশক বাকিতে কিনেছি। এখন শুরু হয়েছে হালখাতার মৌসুম। বাকি পরিশোধের জন্য আমাকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠ থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারিনি। এ অবস্থায় দোকান বাঁকি পরিশোধের কোনো উপায় দেখছি না।”

উপজেলার আরও কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেরিতে রোপণ করা বোরো ধান সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকেই কাটা মাড়াই শুরু হয়। কিন্তু এ বছর ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে সেই ধারা ব্যাহত হয়েছে। বৃষ্টি না থামলে ফলনের বেশ বড় একটা অংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আহ্বান হাবীব বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বিরাজ করছে। রোদ না থাকায় কৃষকেরা ক্ষেতের পাকা ধান কাটতে পারছে না। আবহাওয়া ভালো না হলে বিশ্বগ্রাম চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, “এ বছর অতি বৃষ্টির কারণে কৃষকরা দেরিতে রোপণ করা ধান কাটতে পারছেন না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। একই সঙ্গে কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”

Link copied!