• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বরগুনায় লাশ নিয়ে স্বজনদের টানাটানি


বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম
বরগুনায় লাশ নিয়ে স্বজনদের টানাটানি

নিখোজেঁর ১২ দিন পর বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া এক জেলের মরদেহ নিতে দাবি করেছে দুই পরিবার। স্বজনদের এক পক্ষের দাবি এই মরদেহ ট্রলারের কাইয়ুম মাঝির। অপর স্বজনদের দাবি, এটি কাইয়ুমের নয় জেলে ফরিদের মরদেহ। এমন জটিলতায় উদ্ধার হওয়া দুইটি মরদেহই ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুরে বরগুনা সদর হাসপাতালের সামনে নিহতদের পরিবারের স্বজনেরা অপেক্ষায় থাকে মৃতদেহ নেওয়ার জন্য।

গত ১৭ ফেব্রয়ারি বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে গিয়ে জলদস্যুদের হামলার শিকার হয়ে জেলেরা নিখোঁজ হন। এর মধ্যে ১২ জনকে উদ্ধার করা হলেও আবদুল হাই নামের এক জেলের মৃত্যু হয়। বাকি ৫ জন নিখোঁজ থাকার ১২তম দিনে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এখনো তিন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।

জানা গেছে, কাইয়ুম মাঝি (৩৫) বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া এলাকার মৃত মানিক জমাদ্দাদের ছেলে। অপর জেলে ফরিদের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের নলী চরকগাছিয়া এলাকায়। তার বাবার নাম মৃত হামিদ খান। এই দুইজনই জলদস্যুর শিকার ট্রলারে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের হামলার শিকার হয়ে কাইয়ুম ও ফরিদসহ আরও ৫ জন নিখোঁজ ছিলেন। তাদের মধ্যে গত সোমবার কাইয়ুম অথবা ফরিদ নামের একজন ও মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আবুল কালাম নামের অপর একজনসহ মোট দুই জেলেদের মরদেহ বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার করে বুধবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় তালতলী উপজেলার সখিনা বন্দরে নিয়ে আসে নিখোঁজ জেলের স্বজনেরা। ওইদিন রাতেই দুইজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে কাইয়ুম ও ফরিদ উভয় পরিবারের স্বজনেরা দাবি করে এই মরদেহ তাদের।  

কাইয়ুমের ভাই নুরুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমার দুই ভাই কাইয়ুম ও ইয়াসিন মাছ শিকারে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে ইয়াসিনকে ঘটনার একদিন পর উদ্ধার করা হলেও কাইয়ুম নিখোঁজ হয়। ঘটনার দুই দিন পর আমিসহ ৫ জেলের স্বজনরা মিলে ট্রলার নিয়ে সাগরে খুঁজতে থাকি। প্রথম দফায় চারদিন খুঁজে সন্ধান না পেয়ে ফিরে আসি। গত সোমবার সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া একটি জেলের মাঝি কালাম আমাদের জানায় যে কাইয়ুমের লাশ পাওয়া গেছে। খবর শুনে দ্রত ট্রলার নিয়ে আমরা নিখোঁজ অন্য জেলেদের স্বজনসহ মোট ৫ জন সেখানে গিয়ে আমার ভাই কাইয়ুমের মরদেহ উদ্ধার করি নিয়ে আসি। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর একই ঘটনায় নিখোঁজ অপর জেলে পরিবার দাবি করে এই মরদেহ ফরিদের।”

নুরুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “তিন দিন আগে যখন আমরা সাগরের ভাসমান অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করি, তখন কাইয়ুমের চেহারা বিকৃত হয়নি।  চেহারা বিকৃত হয়নি। আমি চেহারা দেখে নিশ্চিত হই এই মরদেহ আমার ভাই কাইয়ুমের। পরে সেটি ট্রলারে তুলে বরফ দিয়ে নিয়ে ফেরার পথে নিখোঁজ আরেক জেলে কালামের মরদেহ ভাসতে দেখে সেটিকে নিয়ে বুধবার সন্ধায় তালতলীর ফকিরহাটে পৌঁছাই। এই মরদেহ আমার ভাই কাইয়ুমের এটি আমি নিশ্চিত।”

খবর পেয়ে হাসপাতালে ফরিদের মা আনোয়ারা বেগম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মোর পোলারে মুই চিনি। মটরসাইকেল একসিডেন্ট কইর‌্যা মোর পোলার বাম সাইডের নিচের পাডির তিনডা দাঁত নাই। এই লাশেরও তিনডা দাঁত নাই। মোর পোলায় ছয় ছোট্ট সাইজের আছিল। মোর জোতাও ওর পায়ে লাগদ। মুই পাও দেকছি, শরীল দেকছি এই পোলাডা মোর।”

ছয় ও দুই বছরের দুই শিশু কন্যা নিয়ে ছুটে এসেছেন ফরিদের স্ত্রী মিতু। মিতুর দাবি, এই লাশ কাইয়ুমের না, এটা নিশ্চিত ফরিদের লাশ। মিতু বলেন, “মুই এই দুইডা গুরাগারা লইয়া এহন কুম্মে যামু আমহেরা মোর এই মাইয়াগো লাশটা বুঝাইয়া দেন।”

বরগুনার সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সায়লা ফেরদৌস আহসান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে আসা দুটি মরদেহ বিকৃত ও দুই পরিবারই দাবিদার। সেজন্য আমরা ফরেনসকি পরীক্ষার জন্য স্বজনদের ও মরদেহের ডিএনএ স্যাম্পল পাঠাব। ডিএনএর ফলাফলের ভিত্তিতে মরদেহ শনাক্ত করে স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।”

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. আবদুস সালাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “উদ্ধার দুটি মরদেহের একটি আবুল কালামের। এটি নিয়ে জটিলতা নেই। তবে যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে তাই উভয় মরদেহের ফরেনসিক হওয়ার পরই আমরা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করব।”  

Link copied!