চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে তাবাসসুমকে গামছা পড়িয়ে বিদায় করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রাব্বুল হোসেন।
সোমবার (১৯ জুন) বিকেলে ভোলাহাট মেডিকেল মোড়ে ভোলাহাট উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের এক শান্তি সমাবেশে বক্তব্যকালে তিনি এ হুমকি দেন।
এরপর রাব্বুল হোসেনের সেই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের প্রকাশিত ওই ভিডিও বক্তব্যের পুরো সময় জুড়ে ইউএনওকে নিয়ে বিষোদগার করেন চেয়ারম্যান।
শান্তি সমাবেশে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রাব্বুল হোসেন বলেন, “আমাকে বরখাস্ত করার জন্য উৎপাত চলছে। আমার কর্মচারী চালকের ওভারটাইম বেতন দেওয়া হচ্ছে না। শুধু জামায়াত-বিএনপি নয় প্রশাসনে বসে শেখ হাসিনার নামে যারা চলছে বর্তমান ইউএনও এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত।”
ইউএনওকে হুঁশিয়ারি করে চেয়ারম্যান আরও বলেন, “আগামী ঈদুল আজহার পরে ইউএনও উম্মে তাবাসসুমকে গামছা পরিয়ে এখান থেকে বিদায় করা হবে। এখানে দাঁত ভাঙা জবাব কেউ দেখেনি। সবাই চুপচাপ আছে ইনশাআল্লাহ ঈদের পরে সেই রুপ দেখতে পাবে। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানকে সরানোর পাঁয়তারা করছো। ঈদের পরে তোমার চৌদ্দ গুষ্টির দাঁত ভেঙে দেওয়া হবে।”
তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা এই ইউএনওকে কন্ট্রোল করুন, নয়তো বিদায় করুন। ঈদের পরে জামায়াত বিএনপির আন্দোলন তীব্রতর হলে আর এই ইউএনও ভোলাহাটের মাটিতে থাকলে আমাদের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অর্ধেক নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠাবে। আর তাই সামনে ২৫ তারিখের মধ্যে কোনো স্টেপ না নেওয়া হলে যতগুলো প্রকল্পের কাজ চলছে আমি রাব্বুল কোনো মেম্বারের প্রকল্পে স্বাক্ষর করব না।”
এ সময় সমাবেশে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম বাবলুর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন শাহ, উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গরিবুল্লাহ দবিরসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রাব্বুল হোসেনকে ফোন করা হলে ‘পরে মন্তব্য করবেন’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
ভোলাহাট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম বাবু বলেন, “চেয়ারম্যান যে ইউএনওকে হুমকি দেবেন বিষয়টি কারো জানা ছিল না। প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া ঠিক হয়নি। এ নিয়ে আমরা বিব্রত।“
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহা. জিয়াউর রহমান বলেন, “একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রকাশ্যে নারী ইউএনওকে হুমকি দেওয়া দল সমর্থন করে না। আমরা এমন ঘটনায় বিব্রত। দ্রুত দলীয় ফোরামে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অপরদিকে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে তাবাসসুমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, “ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যানের দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আপনার মতামত লিখুন :