• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২,

সাবেক এমপির বাড়িতে চাকরিপ্রার্থীদের অনশন, বললেন ‘আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নেই’


রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫, ০২:২৮ এএম
সাবেক এমপির বাড়িতে চাকরিপ্রার্থীদের অনশন, বললেন ‘আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নেই’
সোমবার দিনভর অনশন ও বিক্ষোভ করেছেন শতাধিক যুবক। ছবি: সংগৃহীত

চাকরির নামে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে রংপুরের পীরগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সদস্য নুর মোহাম্মদ মণ্ডলের বাড়িতে সোমবার দিনভর অনশন ও বিক্ষোভ করেছেন শতাধিক যুবক।

ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০২৩-২৪ সালে উপজেলার শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী ও দপ্তরি পদে নিয়োগ দেওয়ার নামে নুর মোহাম্মদ মণ্ডল জনপ্রতি ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা করে নেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে চাকরিপ্রার্থীদের আশ্বস্ত করে টাকা নেন তিনি। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও চাকরি না দিয়ে বারবার সময়ক্ষেপণ করেন।

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উপজেলা পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা হলে চাকরিপ্রার্থীরা আরও অনিশ্চয়তায় পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের পতনের পর নুর মোহাম্মদ কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও সম্প্রতি প্রকাশ্যে চলাফেরা শুরু করেছেন। এতে ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা টাকা ফেরতের দাবিতে তার বাড়িতে অবস্থান নেন।

সোমবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাকরিপ্রত্যাশীরা পৌর শহরের ওসমানপুর এলাকার নুর মোহাম্মদের বাড়িতে এসে অনশন শুরু করেন। দুপুরে তার বাসা থেকে জানানো হয়, তিনি বাড়িতে নেই। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন চাকরিপ্রার্থীরা। টাকা ফেরত না দিলে আত্মহত্যার হুমকি দেন তারা। কেউ কেউ বাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

জামদানি গ্রামের ভুক্তভোগী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘নৈশপ্রহরীর সরকারি চাকরির নামে আমার কাছে ৮ লাখ টাকা নিয়েছেন নুর মোহাম্মদ মণ্ডল। শেষ সম্বল জমি ও ঘর বন্ধক রেখে টাকা দিয়েছি। এখন চাকরি তো দিলেনই না, টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। টাকা না পেলে আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।’

অন্য এক ভুক্তভোগী বগের বাড়ি গ্রামের শামসুল হক বলেন, ‘চাকরির আশায় বাড়ি বিক্রি করে ৬ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন নুর মোহাম্মদ স্যার টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার।’

এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অনশনকারীদের অভিযোগ লিখিত আকারে দিতে বলেন তারা। পরে পুলিশের আশ্বাসে বিকেল ৪টার দিকে চাকরিপ্রত্যাশীরা অনশন ভাঙেন।

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে নুর মোহাম্মদ মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিক আহামেদ বলেন, ‘চাকরিপ্রার্থীরা মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। আমি তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নুর মোহাম্মদ মণ্ডল একসময় জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে বিএনপিতেও রাজনীতি করেছেন। পরাজয়ের পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

Link copied!