• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

হেরে ইনু বললেন নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে


কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৪, ০৯:০৮ এএম
হেরে ইনু বললেন নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। ছবি : সংগৃহীত

দলের প্রতীক মশাল হলেও আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনে কারচুপি হয়েছে বলেই হারের মুখ দেখেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

ভোটে হারের পরদিন সোমবার (৮ জানুয়ারি) ভেড়ামারা উপজেলার গোলাপনগর গ্রামের নিজ বাড়িতে নিজের কর্মী ও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।

নিজের পরাজয়ের বিষয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, “এই আসনে যেভাবে নির্বাচন হল, সেখানে আমি মনে করি পরিকল্পিতভাবে ভোট কারচুপি হয়েছে। এখানে প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তায় আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং পরাজিত হয়েছি।”

১৪ দলীয় জোটের নেতা ইনু বলেন, “সারা দেশে একটা বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও শেষ পর্যন্ত একভাবে জনগণের অংশগ্রহণ ও সাড়া পাওয়া গেছে। সেদিক থেকে মনে হয় নির্বাচনী কাজটা নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে। অন্যান্য সব জায়গায় কীভাবে নির্বাচন হয়েছে সেটা আমাকে দেখতে হবে। তবে কুষ্টিয়া-২ আসনে যেভাবে নির্বাচন হলো আমি মনে করি পরিকল্পিতভাবে ভোট কারচুপি হয়েছে।”

তিনি বলেন, “ভেড়ামারা-মিরপুর আসনে প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে আমি ক্ষতিগ্রস্ত ও পরাজিত হয়েছি। এলাকায় সবাই জানেন, কালো টাকার ছড়াছড়ি, মাস্তানি পেশিশক্তির প্রভাব থাকলেও প্রশাসনের নীরবতার কারণেই আমি পরাজিত হয়েছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রশাসনের পরিকল্পিত নিষ্ক্রিয়তা পরাজয় নিশ্চিত করতে ভূমিকা রেখেছে। কেন প্রশাসনের এই উদ্দেশ্যমূলক নিষ্ক্রিয়তা, সেটা আমি পরে ভেবে দেখব।”

নির্বাচন পরবর্তী সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জাসদ সভাপতি বলেন, “কেবল নির্বাচন শেষ হলো। এই মুহূর্তে আমি রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে ভাবিনি। দলের সঙ্গে বসব, এরপর আমরা রাজনৈতিক পরিকল্পনা করব।”

নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়ে ইনু বলেন, “১৪ দলীয় জোটের যে নির্বাচনী বিজয় ও এর ভিত্তিতে শেখ হাসিনা নতুন সরকার গঠন করবেন। সেটা রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার জন্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। আমি সেটাকে স্বাগত জানাচ্ছি।”

রোববার ঘোষিত ফলাফলে এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা কামারুল আরেফিন ট্রাক প্রতীকে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ইনু পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট। তিনি ২৩ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন।

এ আসন থেকে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাসদ সভাপতি। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

অপরদিকে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এর আগে তিনি একসময় সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।  

গত তিনটি নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা ইনুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হননি। বরং আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশই তার সঙ্গে ভোটের কাজ করেছিলেন।

কিন্তু ১৪ দলের নেতা ইনু এবার আওয়ামী লীগের সব অংশের সমর্থন পাননি। বরং আওয়ামী লীগের নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের পৈত্রিক বাড়িও মিরপুর উপজেলায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাকে নিজের এলাকায় মনোনয়ন না দিয়ে কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনে নৌকার মাঝি করে। তিনি সেখান থেকে টানা তৃতীয়বারের মত জিতেছেন।

কুষ্টিয়া-২ আসনের রাজনীতিতে ইনু-হানিফ দ্বৈরত বহুল চর্চিত বিষয়। এখানে জাসদ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত বার বার সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে এসেছে।

এবারের নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে অনেকেরই ভরাডুবি হয়েছে। হেরে গেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তাদের পাশাপাশি ইনুর পরাজয় নিয়েও নানা আলোচনা হচ্ছে।

তবে বরিশাল-২ থেকে জিতেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং বগুড়া-৪ থেকে জিতেছেন জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন।

Link copied!