গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত আরেক শ্রমিক মো. জালাল উদ্দিন (৪০) মারা গেছেন। শনিবার (১১ নভেম্বর) রাত ১টা দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, মৃতদেহটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে।
জালাল উদ্দিন (৪০) জরুন এলাকার ইসলাম গ্রুপের সুইং সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের চান মিয়ার ছেলে। জালাল জরুন এলাকার ফজল মোল্লার ভাড়া বাসায় সপরিবার বসবাস করতেন।
জালালের সহকর্মী সফিকুল ইসলাম জানান, গত বুধবার কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় ইসলাম গ্রুপের তিনটি কারখানার শ্রমিকেরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর শুরু করেন। পুলিশ তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শ্রমিকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে শ্রমিকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। ওই ঘটনায় অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হন।
তিনি আরও জানান, আহত শ্রমিকদের মধ্যে দুজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থান আঞ্জুয়ারা খাতুন (৩০) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। একই ঘটনায় আহত জালাল উদ্দিন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দিনগত রাতে তার মৃত্যু হয়।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বুধবার আমি ও জালাল একসঙ্গে কারখানায় কাজে যাই। কারখানায় বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় ছুটি ঘোষণা করা হলে আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে পুলিশের ছোড়া গুলি জালালের ঊরু থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে লাগে। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শুনেছি তিনি মারা গেছেন, তবে এখনো নিশ্চিত নই। থানা থেকে একজন অফিসারকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি পৌঁছালে বিস্তারিত জানা যাবে।’
পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বেতন বাড়ানোর দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করে আসছিলেন। এরপর গত মঙ্গলবার মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সরকার, কিন্তু এতে শ্রমিকেরা সন্তুষ্ট নন। যার কারণে বুধবার থেকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী, জরুন, বাইমাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা বিক্ষোভ করেন।
একপর্যায়ে শ্রমিকেরা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় শ্রমিকেরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।