গভীর বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধ। নিষেধাজ্ঞা ৬ দিন পার হলেও প্রণোদনার চাল পাননি উপকূলীয় জেলা বরগুনার জেলেরা। এতে জেলে পরিবারগুলোর দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে।
শুক্রবার (২৬ মে) সকালে বরগুনা জেলা বিভিন্ন এলাকায় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাছের উৎপাদন ও প্রজনন বাড়াতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বাংলাদেশের জলসীমায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে শত-শত নৌকা-ট্রলার। জেলেদের মধ্যে কেউ জাল বুনছেন, কেউবা ঘাটে অলস সময় পার করছেন। কেউ আবার ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার পুনর্বাসনের জন্য জেলেদের ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে।
বরগুনা সদর উপজেলায় বদরখালী ইউনিয়নের কুমড়াখালী গ্রামের ইদ্রিস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এবারের চাল কবে পাব জানি না। আমরা ধারদেনায় জর্জরিত। মাছ ধরতে না পারলে দেনা পরিশোধ করবো কীভাবে? এক সপ্তাহ গেলেও সরকারের কাছ থেকে কিছুই পাইনি।”
জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, “মোগো কষ্ট কেউ দেখে না। জীবনের ঝুঁকি লইয়া মোরা সাগরে মাছ ধরতে যাই। সরকার মোগো ৮৬ কেজি চাউল দেয় তা দিয়ে পরিবার কীভাবে চলে। চাউল দিলেও ১০-১৫ কেজি চাউল কম দিবে। এই ৮৬ কেজি চাল যারা পান, তাদের মধ্যে অধিকাংশ জেলে না। অনেক প্রকৃত জেলে চাল পায় না।”
এম বালিয়াতলীর মেহেদী হাসান নামের এক মাঝি বলেন, “আমরা জেলে মাছ শিকার ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানি না। মাছ শিকার করে পরিবার চালাই। ৬৫ দিন অবরোধের সময় আমাদের ৮৬ কেজি চাল দেয় সরকার, তা দিয়ে আমাদের কিছুই হয় না। তবু সরকারের আইনকে সম্মান জানিয়ে মাছ শিকারে যাই না। কিন্তু ভারতীয় জেলেরা আমাদের সমুদ্র সীমানায় এসে মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। অবরোধের পরে সাগরে গিয়ে আমরা মাছ পাই না।”
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, সামুদ্রিক মাছের নিরাপদ প্রজনন ও উৎপাদন বাড়াতে ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য অধিদপ্তর। এই ৬৫ দিন সমুদ্রে নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে ভিজিএফের খাদ্য সহায়তা হিসেবে জেলায় ২৭ হাজার ২৫০ জন জেলে সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছেন। জেলেদের জন্য বরাদ্দ করা চাল খুব দ্রুত বিতরণ করা হবে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, অবরোধের এই সময়ে জেলেরা যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে না থাকে সে জন্য জেলে পরিবারকে ৮৬ কেজি করে চাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে।