• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আ.লীগ-বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘাতের শঙ্কা


সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩, ০১:৫৪ পিএম
আ.লীগ-বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘাতের শঙ্কা

দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াসহ সব ‘রাজবন্দির’ মুক্তি, সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের প্রতিবাদ; বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেটে শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও অগ্নিসন্ত্রাসের প্রতিবাদে প্রায় একই সময়ে নগরীতে শান্তি সমাবেশ করবে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।

দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সিলেটে মুখোমুখি হয়েছিল দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ওই দিন খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে নগরের কোর্ট পয়েন্টে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অনেকে। এরপর উভয় দল নানা ইস্যুতে রাজপথে সরব থাকলেও কখনো মুখোমুখি হয়নি।

শনিবার ‘বিভাগীয় সমাবেশ’ ও ‘শান্তি সমাবেশ’-এর মাধ্যমে আবার রাজপথে ফের মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল। দীর্ঘদিন পর একই দিনে দুই দলের কর্মসূচির কারণে সংঘাতের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। তবে দুই দলের নেতাদের প্রত্যাশা, শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হবে সমাবেশ।

শনিবার বেলা ২টায় সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে বিএনপির সমাবেশ শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান।

সমাবেশ সফলে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সিলেটজুড়ে কর্মী সভা, পথসভা, জনসংযোগের মাধ্যমে সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের চেষ্টা করছেন তারা। সমাবেশের বিষয়টি অবহিত করে দলটির পক্ষ থেকে মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

দলীয় সমাবেশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, “৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপি আহূত বিভাগীয় সমাবেশ ইতিহাস সৃষ্টি করবে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে শুধু জাতীয়তাবাদী শক্তি নয়, গণতন্ত্রকামী সিলেটবাসীর মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সূচনা হয়েছে। সিলেটবাসী সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে সমাবেশ সফলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।”

অপরদিকে একই দিনে সিলেটে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে আওয়ামী লীগ। প্রথমে এই সমাবেশ বিএনপির সমাবেশস্থল রেজিস্ট্রি মাঠে করার ঘোষণা দেয় দলটি। পরে স্থান পরিবর্তন করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়।

শনিবার বিকাল ৩টায় এই সমাবেশ শুরু হবে। শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক।

দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আর ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতির কারণে হঠাৎ করেই সিলেটের রাজনীতিতে দেখা দিয়েছে উত্তাপ। দেখা দিয়েছে সংঘাতের শঙ্কাও।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চাই। অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই। নেতাকর্মীদেরও বলেছি, সমাবেশের দিকে নজর দিতে। কোনো বিশৃঙ্খলায় না জড়াতে। যদি সমাবেশ বানচাল করতে হঠকারিতা হয়, সেটা জনগণ প্রতিহত করবে।”

তবে বিএনপি শান্তিুপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চায় জানিয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, “সিলেটের রাজনীতিতে সম্প্রীতির ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা আশাবাদী এটা কেউ নষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। যার যার কর্মসূচি যার যার মতো করে পালন করবেন। তবে কোনো প্রতিবন্ধকতা এলে তা জয় করে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের সমাবেশ সফল করবে। আমরা সেই রকম প্রস্তুতি নিয়েছি।”

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, “আমরা সব সময় শান্তির পক্ষে। বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করলে সংঘাত হবে না। আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। আমাদের সমাবেশ রেজিস্ট্রারি মাঠে ছিল। তারা (বিএনপি) বলেছে, সেখানে সমাবেশ ঘিরে প্রচার-প্রচারণা, পোস্টার বিতরণ করেছে। যে কারণে স্থান পাল্টে আমরা শহীদ মিনারে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছি।”

বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করলে সংঘাত হবে না জানিয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগ সব সময় শান্তিপূর্ণ রাজনীতির পক্ষে। রাজনৈতিক সহাবস্থানের পক্ষে। তাই আমরা উদারতা দেখিয়ে নিজেদের কর্মসূচির স্থানও পরিবর্তন করেছি। এখন বিএনপি যদি বিশৃঙ্খলা না করে তবে আমাদের শান্তি সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হবে।”

দুই দলের পৃথক কর্মসূচির কারণে বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশও। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস বলেন, “শুক্রবার বিকেল থেকেই নগরে অতিরিক্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। নগরের সব মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নগরের প্রবেশপথগুলোতে পেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সেই জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে।”

Link copied!