• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪৬

জন্মের পরই বাবা, এখন হারালেন মাকে, ১২ বছরের মেঘের জীবনে নামল অন্ধকার


রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম
জন্মের পরই বাবা, এখন হারালেন মাকে, ১২ বছরের মেঘের জীবনে নামল অন্ধকার
ছবি : সংগৃহীত

মেঘের অনেক রং হয়, সময়ে সময়ে তা পাল্টায়। ভরা বর্ষার মেঘ কালো। শরতের মেঘ প্রায় সাদা। আবার মাঝেমধ্যে দেখা যায় সাদা মেঘের রংও হালকা থেকে ঘন হয়। কখনো কখনো ঘন কালো মেঘে নামে ঝড়-বৃষ্টি। সাংবাদিক মাসুমা ইসলামের ১২ বছরে ছেলে মেঘের জীবনও প্রকৃতির সেই মেঘের মতোই।

জন্মের পরই বাবার মৃত্যু হয়। বাবার ভালোবাসা জোটেনি মেঘের। মেঘের জীবনের বাবাহারা মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এখন ঢেকে গেল মাহারা কালবৈশাখীতে। ১২ বছর বয়সে মেঘকে হারাতে হলো বাবা-মা দুজনকেই।

এখন টেলিভিশনের রাজশাহী ব্যুরো অফিসের রিপোর্টার নিহত মাসুমা ইসলাম বাসচাপায় মারা যান। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মায়ের কবরে মাটি দিয়ে এসে সে কবরস্থানের দেয়ালের ওপরে দুই হাত দিয়ে অশ্রুশিক্ত আর ক্লান্ত নয়নে তাকিয়ে আছে সেই কবরের দিকে। ১২ বছরের ছোট্ট ছেলেটা আজ বাবা-মাকে হারিয়ে যেন নির্বাক।

মাসুমাকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে রাজশাহীতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা ছুটি গিয়েছিলেন নাটোর জেলার গুরুদাসপুরের বাড়িতে। অশ্রুশিক্ত চোখে সবাই তার কর্মময় সময়গুলো স্মৃতিচারণা করেন।

জানাজায় গিয়ে মাসুমা ইসলামের সন্তান মেঘের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন জাহিদ হাসান সাব্বির নামের এক সংবাদকর্মী। মেঘের কষ্ট অনুধাবন করেই যেন তিনি লিখেছেন, ‘বাবা মারা গেছে বছর বারো আগে, আমি তখন শুধুই অবুঝ শিশু। আজ ভোরে মা-ও গেল ওপারে, আমার মতো আর অভাগা নেই এ পৃথিবীতে।’

জাহিদ হাসান সাব্বির বলেন, ‘মেঘ মায়ের জানাজায় ছিল। ছোট মানুষ এই বয়সে আর কত দুঃখ সহ্য করবে। জন্মের পরে বাবা মারা গেছে। বাবাকে দেখেনি। ১২ বছর বয়সে এবার মা মারা গেল। এখন নানাবাড়িতে থাকবে মেঘ। মেঘ রাজশাহীতে সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ওই স্কুলে ওর মা (মাসুমা) ভর্তি করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিহত মাসুমার বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। মাসুমার সঙ্গে মেঘের চেহারার অনেক মিল রয়েছে। এক দেখাতে বোঝা যায় এটা মাসুমার সন্তান। মাসুমার মা-বাবা খুব কান্না করছিলেন। এমন ঘটনায় আসলে তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। মেঘের জীবন মেঘময় হয়ে গেল।’

১৪ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়িতে স্বামীসহ বেড়াতে যাচ্ছিলেন মাসুমা। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নূরজাহান হোটেলের উল্টোদিকে বাস থেকে নেমে সিএনজি ঠিক করার সময় দ্রুতগামী একটি বাস তাদের ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে সিএনজি অটোরিকশার চালক, মাসুমা আক্তার ও তার স্বামী গুরুতর আহত হন। প্রথমে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসায় উন্নতি না হলে তাকে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মাসুমা ইসলাম না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। 

Link copied!