• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

১২ দিন পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে এলো আবিরের মরদেহ


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৪, ০২:০৯ পিএম
১২ দিন পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে এলো আবিরের মরদেহ
ঝাঁপাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা হয় আবিরের। ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি গবেষক শেখ আবির হোসেনের মরদেহ ১২ দিন পর তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পৌঁছেছে।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে আবিরের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে সেখানে শত শত মানুষের ভিড় জমে।

এর আগে বুধবার বেলা পৌনে বারোটার দিকে আবিরের মরদেহ বহনকারী উড়োজাহাজটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবরতরণ করে।

মাত্র ১০ মাস আগে আবিরের বাবা মারা যান। অল্প সময়ে ব্যবধানে ছেলেকেও হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মা আঞ্জুয়ারা বেগম। ছেলের শোকে তার আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।

আঞ্জুয়ারা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ছিনতাইকারীদের বাধা দেওয়ায় আমার ছেলেকে জীবন দিতে হয়েছে।

নিহত আবিরের শ্বশুর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহ আলম মজুমদার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ছাত্র সংস্থা সহযোগিতায় আবিরের মরদেহ দ্রুত দেশে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে মামলার নিষ্পত্তির জন্য আবিরের স্ত্রী ও সন্তানকে আমেরিকায় থাকতে হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে সেখানকার আইনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে।

তবে বাংলাদেশ সরকারসহ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কাছে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত ও নিহতের পরিবারের ক্ষতিপূরণের সুব্যবস্থা করার দাবি জানায় পরিবারটির সদস্যরা।

বাড়িতে আবিরের মরদেহ পৌঁছানোর পর রাত ১১টার দিকে ঝাঁপাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশেই আবিরকে দাফন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার টেক্সাসের ক্রিস ফুড মার্ট নামে একটি রেস্তোঁরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শেখ আবির হোসেন নিহত হন।

নিহত শেখ আবির হোসেন (৩৮) কলারোয়া উপজেলার উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের ঝাঁপাঘাট গ্রামের মৃত শেখ আজিজুল হাকিমের ছেলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লামার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান। পড়াশোনার পাশাপাশি টেক্সাসের বিউমন্ট শহরের ক্রিস ফুড মার্ট নামের একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন। আবির পরিবারের পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট।

নিহতের ভাই শেখ জাকির হোসেন জানান, এক বছর আগে ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তাঁর ভাই আবির। বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পিএইচডি শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। আবিরের স্ত্রী সানজিদা আলম মজুমদার তাঁদের দুই বছরের মেয়ে আরশিয়াকে নিয়ে নিউইয়র্কে মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন। আর আবির থাকতেন টেক্সাসে। আবির যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার দুই মাসের মধ্যে তাদের বাবা আজিজুল হাকিম মারা যান।

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে ২০১৪ সালে আবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। এরপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তারপর অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। এর এক বছর পরেই তিনি সেখানে দুর্বৃত্তের গুলিতে মারা গেলেন।

Link copied!