• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

আহমদিয়াদের জলসা ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ২


পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩, ০৮:১৩ এএম
আহমদিয়াদের জলসা ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ২

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাতের ‘সালানা জলসা’ ঘিরে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।

শুক্রবার (৩ মার্চ) জুমার নামাজ শেষে বেলা দুইটার দিকে পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

নিহতরা হলেন আরিফুর রহমান (২৮) ও জাহিদ হাসান (২৩)। আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার স্বজনেরা জানিয়েছেন, আরিফুর শহরের একটি ছাপাখানার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জুমার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে তার মাথায় গুলি লাগে। জাহিদ হাসান নাটোরের বনপাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তাকে করতোয়া নদীর ধারে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আহমদিয়া জামাতের সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশের চৌধুরী।

এ ঘটনায় ৯ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাইয়ুম আলী, ভবেশ চন্দ্র পাল, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) কাজী কামরুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আবদুল্লাহ, কনস্টেবল আল আমিন, ফরিদুর রহমান ও কামরুজ্জামান।

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দুজন সাংবাদিকও আহত হন। তারা হলেন এসএ টেলিভিশনের পঞ্চগড় প্রতিনিধি কামরুজ্জামান ও অনলাইন সংবাদকর্মী ফাহিম হাসান।

জানা গেছে, দুপুরে জুমার নামাজের মাধ্যমে জেলা শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া জামাতের সালানা জলসার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এই জলসা আগামীকাল রোববার পর্যন্ত চলার কথা ছিল।

এই জলসা বন্ধের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখা, ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি, ইমাম-মোয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি, পঞ্চগড় কওমি ওলামা পরিষদ ও জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ। এই দাবিতে ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে তেঁতুলিয়া-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। এ ছাড়া ওই দিন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের দুটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।

আহমদিয়া জামাতের জলসা বন্ধের দাবিতে শুক্রবার জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হন। সেখান থেকে তাঁরা মিছিল নিয়ে করতোয়া সেতুর দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁদের থামিয়ে দেয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পড়েন। কিছুক্ষণ পর চৌরঙ্গী মোড়সংলগ্ন সিনেমা হল সড়ক থেকে একদল বিক্ষোভকারী মিছিল নিয়ে এসে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। তখন পুলিশ ধাওয়া দিলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় করতোয়া সেতুসংলগ্ন ট্রাফিক পুলিশের একটি কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।

এর মধ্যে বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন পথে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বসতি আহম্মদনগরের দিকে যান। সেখানে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অন্তত ২৫টি বাড়িঘরে আগুন দেন। এ ছাড়া তাঁরা শহরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের চারটি দোকানের মালামাল বের করে অগ্নিসংযোগ করেন।

আহমদিয়া জামাতের সালানা জলসার মিডিয়া সেলে কর্মরত মাহমুদ আহমদ বলেন, তাদের ২০ থেকে ২৫টি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। হামলায় অনেকেই আহত হয়েছেন।

পরে রাত পৌনে আটটার দিকে আহমদিয়া জামাতের সেই জলসাস্থলে যান জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা। তাঁরা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জসলা বন্ধের অনুরোধ করেন। পরে জলসা বন্ধ হয়।

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশের চৌধুরী বলেন, ‘প্রশাসনের অনুরোধে জলসা বন্ধ করা হয়েছে। আমাদের ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিচার দাবি করছি।’

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

Link copied!