• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২,
  • ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আল্লাহর কাছে বিচার দেওয়া সেই বৃদ্ধের হাহাকার


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ১০:২৪ এএম
আল্লাহর কাছে বিচার দেওয়া সেই বৃদ্ধের হাহাকার

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ৭০ বছর বয়সী এক ফকিরের মাথার জট ও দাড়ি-গোঁফ জোরপূর্বক কেটে দেওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভুক্তভোগী ওই বৃদ্ধের নাম হালিম উদ্দিন আকন্দ, স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘হালিম ফকির’ নামেই পরিচিত।

ঘটনাটি ঘটে গত কোরবানির ঈদের আগে উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে। তবে সম্প্রতি ঘটনার ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে।

কী ঘটেছিল সেদিন

চোখে-মুখে বাউল ফকিরের মতো চেহারা, মাথায় ৩৪ বছরের জট ধরা চুল। সেদিন হালিম বাজারে গেলে হঠাৎ একদল লোক তাকে লক্ষ্য করে চুল কাটার চেষ্টা করে। ভয়ে তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা ও মাথায় পাগড়ি পরা দুজন তাকে ধরে ফেলে মেশিন দিয়ে চুল ও দাড়ি জোরপূর্বক কেটে দেয়। এসময় তিনি বারবার চিৎকার করে বলেন, “আল্লাহ, তুই দেহিস।”

হালিম উদ্দিন কে?

স্থানীয়দের ভাষ্য, হালিম উদ্দিন কোনো উন্মাদ নন। সংসার জীবনে তার স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। একসময় কৃষিকাজ করলেও বর্তমানে তিনি ভক্তিমূলক জীবনযাপন করেন। হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ পরাণ (র.) এর ভক্ত হালিম নক্সবন্দিয়া তরিকার অনুসারী। দীর্ঘ সময় ধরে মাথার জট চুলকে আধ্যাত্মিক প্রতীক হিসেবে ধরে রেখেছিলেন তিনি।

কারা করল এমন কাজ?

‘হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা ওই চুল কাটার সঙ্গে জড়িত। সংগঠনটির এক সদস্য সোহরাব হোসেন আশরাফী দাবি করেছেন—বৃদ্ধের স্বজনদের অনুরোধে তারা ঢাকায় থেকে এসে মানবিক কারণে চুল কাটেন।

তবে হালিম উদ্দিনের বড় ছেলে এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “আমরা কাউকে বাবার চুল কাটতে বলিনি। কারও কোনো অসুবিধাও হচ্ছিল না। যারা করেছে, তারা নিজেরাই পরিকল্পনা করে করেছে। এটা কোনোভাবেই মানবিক কাজ নয়, বরং জোরপূর্বক অপমান।”

নিন্দার ঝড়

ঘটনার পর ময়মনসিংহ বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আসলাম বলেন, “হালিম নক্সবন্দিয়া ধারায় অনুরক্ত। তিনি অসুস্থ মানুষ। তার সঙ্গে যা হয়েছে, তা অত্যন্ত অন্যায়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”

বৃদ্ধের হাহাকার

চোখ ভরা কষ্ট নিয়ে হালিম উদ্দিন বলেন,
“৮-১০ জনে ধইরাল্লে কী করুম? আমারে মাটিতে ফালায়া চুল কাইটা দিল। আমি বেহুঁশ হইয়া গেছিলাম। সেই থাইক্কা কাজকর্ম করতে পারি না, বাজারেও যাই না। নিজেরে আড়াল কইরা চলি। যারা কাইটছে, তাদের বিচার আল্লাহ করমু।”

পুলিশের অবস্থান

তারাকান্দা থানার ওসি মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন। ভুক্তভোগী আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Link copied!