• ঢাকা
  • বুধবার, ০৯ জুলাই, ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মুহররম ১৪৪৬

শিশু নির্যাতনের অভিযোগ পুলিশের স্ত্রীর, মামলা নেয়নি পুলিশ 


লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২১, ০৮:৫৫ পিএম
শিশু নির্যাতনের অভিযোগ পুলিশের স্ত্রীর, মামলা নেয়নি পুলিশ 

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বাসিন্দা ঢাকায় কর্মরত আজাহার আলী সুমন নামে এক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় গৃহকর্ত্রী শিশুকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

নির্যাতিত শিশু হাসিনা খাতুনকে (৭) আহত অবস্থায় লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩১আগস্ট) রাতে স্থানীয় আদিতমারী থানায় শিশু হাসিনার নানি আমেনা বেগম বাদী হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দিলে অজ্ঞাত কারনে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম মামলা নেয়নি।

এসময় ওসি কর্কশ মেজাজে বলেন, ঘটনা যেখানে সেখানেই মামলা করতে হবে। আমি এই মামলা নিলে অভিযুক্ত ওসি ও তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্যায় করা হবে।

জানা গেছে, অভিযুক্ত ওসি আজাহার আলী সমুনের বাড়ি আদিতমারী উপজেলার দুলালী গ্রামে। চাকরির সুবাদে ঢাকা শ্যামলীর একটি বাসায় তিনি ভাড়া থাকতেন। ওই বাসায় ওসির স্ত্রী ডেইজী বেগমের হাতে কাজের মেয়ে ৭ বছরের ওই শিশু হাসিনা অমানুসিক নির্যাতনের শিকার হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা শিশু হাসিনাকে লেখা পড়া শিখিয়ে বড় করার কথা বলে লালমনিরহাট থেকে  ঢাকায় নিয়ে যায়। কিন্তু বাসায় নিয়ে ওই শিশুকে দিয়ে গৃহকর্ত্রীর ভারি কাজ করাতেন ওসির স্ত্রী ডেইজী। আর কাজ করতে না পাড়ায় বদ মেজাজি  ডেইজী শুরু করে শারীরিক নির্যাতন। শিশু হাসিনার শরীরে বটি, সুপারি কাটা স্বত্তা দিয়ে চোট দেওয়া হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেওয়া হয় গরম খন্তা দিয়ে ছ্যাঁকা। বেত দিয়ে পেটানো থেকে শুরু করে হাতে যা পেত তা দিয়েই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হতো। কান্নাকাটি করলে জোরপূর্বক নিয়ে ঘরে বন্দি করে রাখতেন ডেইজী বেগম। কাজের মেয়ে শিশু হাসিনা তখন বাঁচাও-বাঁচাও  চিৎকার করছিল আর কাঁদছিল। তবুও মন গলেনি পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ডেইজীর।

ওসি আজাহার আলী সুমনের বড় বোন মানিকজান বেগমের সহায়তায় একবছর আগে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের মহিষতুলি গ্রাম থেকে কাজের মেয়ে হিসেবে হাসিনাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন এসআই আজাহার (বর্তমানে ওসি)। দীর্ঘ এক বছর ধরে শারীরিক নির্যাতন করত বলে জানায় ৭ বছরের শিশু হাসিনা। পরবর্তীতে শিশুটি শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে গত রোববার বিকেলে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ফলিমারী গ্রামে নিয়ে আসানে ওই ওসির ড্রাইভার মো. রিয়াজুল ইসলাম। এর পর ওই ড্রাইভারের কাছে ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একটি লিখিত নেন। পরে এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় শিশুটিকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে আজাহার আলী সুমন ওসি পদে পদোন্নতি পেয়ে টাঙ্গাইলে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে।

তবে এ ঘটনায় মামলা না নিয়ে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলামের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

এ বিষয়ে শিশু হাসিনা খাতুন বলেন, আমাকে নিয়ে যাওয়ার পর হতে বাড়ির সব কাজ করাত। আর কাজ করতে না পারলে আমাকে হাতে যা পেত তখন তা দিয়েই মারত। আমার মাথায় মাইর দিয়ে মাথা ফেটে গেছিল। কোন ওষুধ না দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখত কোন মানুষ যাতে না শুনে। প্রতিদিন আমাকে মারত। আমি অনেক কান্না করছি। তখন আরও মারে।

শিশুটির মা রহিমা বেগম বলেন, আমার ভাল মেয়ে নিয়ে গিয়ে মারতে মারতে শেষ করে দিছে। বড় বড় ভারী কাজ করাইছে। আর সে কাজ করতে না পরলে ডেইজী বেগম আজাহারের বউ হাতে যা থাকত তা দিয়েই পেটাতো। আমার মেয়ের পুরো শরীরে কাটা দাগ। এমন কোন জায়গা নাই মাইরের দাগ নাই। আমি এর বিচার চাই।

জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর উপদেষ্টা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক মজিবর রহমান বলেন, নির্যাতিত ওই শিশুটির পরিবার অত্যন্ত গরীব। তাদের পক্ষে ঢাকায় গিয়ে মামলা করা সম্ভব নয়। তবে নির্যাতিত শিশুটির পরিবার লালমনিরহাটের বাসিন্দা হওয়ায় তারা এখানেই আইনের পেতে পারে। আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম ঢাকায় কর্মরত অভিযুক্ত ওসি আজাহার আলী সুমন বাঁচানো চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন এ সাংস্কৃতিক সংগঠক।

তবে পুলিশ কর্মকর্তা আজাহার আলী সুমন অভিযোগ অস্বীকার সাফ জানিয়ে দেন, “এ ঘটনার আমি কিছুই জানি না।” 

এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মঞ্জুর মোর্শেদ দোলন  বলেন, শিশু লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শিশুটির সারা শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। পুরো শরীরে পুরনো ও নতুন কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

Link copied!