• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রক্ষার্থে টুঙ্গিপাড়ায় দৃষ্টিনন্দন ঘাট নির্মাণ


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২১, ০১:৫৯ পিএম
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রক্ষার্থে টুঙ্গিপাড়ায় দৃষ্টিনন্দন ঘাট নির্মাণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকে ধরে রাখতে ও নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে টুঙ্গিপাড়ায় দুইটি দৃষ্টিনন্দন ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। টুঙ্গিপাড়ার মধুমতি নদীর পাড়ে পাটগাতি বাজার সংলগ্ন লঞ্চঘাট ও বাঘিয়ার নদীর পাড়ে টুঙ্গিপাড়া খাদ্য গুদামের পাশে এই ঘাট দুইটি নির্মাণ করা হয়। টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার উদ্যোগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ঘাট দু’টি নির্মাণ করে।

টুঙ্গিপাড়া পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবিত থাকাকালীন ঢাকা থেকে লঞ্চ বা স্টিমারে করে নিজ বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায় আসতেন। স্টিমারে এসে নামতেন মধুমতি নদী পাড়ের টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতি বাজার সংলগ্ন ঘাটে। আর লঞ্চে আসলে নামতেন বাঘিয়ার নদীর পাড়ে খাদ্য গুদামের পাশে। খাদ্য গুদাম থেকে তার বাড়ি প্রায় তিনশ মিটার দূরে। আর পাটগাতি থকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি প্রায় দুই কিলোমিটার। এই দুইটি স্থান থেকে পায়ে হেঁটে বাড়িতে যেতেন তিনি। আবার যখন ঢাকায় ফিরতেন তখন ঐ ঘাট দু’টি দিয়েই তিনি স্টিমার বা লঞ্চে উঠতেন। 

এই স্মৃতিকে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে টুঙ্গিপাড়া পৌরসভা উদ্যোগ গ্রহণ করে। পরে গোপালগঞ্জের স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর পাটগাতির ঘাটটি প্রায় ৯ কোটি টাকা আর টুঙ্গিপাড়ার ঘোপেরডাঙ্গায় খাদ্য গুদামের পাশের ঘাটটি ৪ কোটি টাকা ব্যয় করে আধুনিক লঞ্চঘাটে পরিণত করে। 

শেখ পরিবারের সদস্য শেখ বোরহান উদ্দিন বলেন, “বঙ্গবন্ধু ও জাতির জনক খেতাব পাওয়ার আগে যখন তিনি ঢাকাতে থাকতেন। তখন তিনি ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তিনি স্টিমারে বা লঞ্চে করে বরিশাল হয়ে পাটগাতি লঞ্চঘাট বা ঘোপেরডাঙ্গা খাদ্য গুদামের পাশে একটা ছোট ঘাট ছিল সেখানে নামতেন। সেখান থেকে নৌকা করে বাড়িতে পৌঁছাতেন। আবার কখনও হেঁটেও আসতেন।” 

শেখ বোরহান উদ্দিন আরও জানান, বঙ্গবন্ধু পরিবার নিয়ে যখন বাড়িতে আসতেন তখন ওনাদের বিশাল বড় ছই দেওয়া পানসি নৌকা ছিল। নৌকার ছইয়ের ভিতরে দুইটা রুম ছিল। পরে লঞ্চ বা স্টিমার থেকে নামার পর শেখ হাসিনা, রেহানাসহ অন্যরা নৌকায় করে বাড়ি পৌঁছাতেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে আসতেন খুবই কম। বেশি আসতেন একা। তখন সঙ্গে নেতা কর্মীরা থাকতেন। দেশ স্বাধীনের পর প্রথম আসলেন হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়ায়। তখন টুঙ্গিপাড়ায় কোনো হ্যালিপ্যাড ছিল না। নামলেন ওনাদের বাড়ির সামনে খোলা জায়গায়। তখন ওনার সঙ্গে দেশ বিদেশের অনেক সাংবাদিক ও দলীয় নেতাকর্মী ছিল। এরপর যখন ওনার বাবা শেখ লুৎফর রহমান মারা যায়, তখন তিনি গাজী রকেট স্টিমারে করে খাদ্য গুদামের পাশে এসে নামেন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে বাড়ি আসেন। 

পাটগাতি গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, “পাকিস্তান আমল থেকে এখানে একটা লঞ্চঘাট ছিল। এই ঘাট দিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রায়ই যাতায়াত করতেন। এখান থেকে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত মাটির কাঁচা রাস্তা ছিল। এই রাস্তা দিয়েই তিনি হেঁটে বাড়ি যেতেন। যাওয়ার সময় যাদের সাথে দেখা হতো তাদের সাথে কুশল বিনিময় করতেন। আবার যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখনও জনগণের সাথে মিশে যেতেন।”

পাটগাতি লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা নমিতা সাহা (৫৫) বলেন, “আমাদের বাড়ির পাশেই লঞ্চঘাট। বঙ্গবন্ধু এই লঞ্চঘাটে এসে নামতেন। তখন আমি ছোট। দেখতাম বঙ্গবন্ধু লঞ্চ থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে পাটগাতি বাজার হয়ে বাড়ি যেতেন।”

টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ঢাকাতে রাজনীতি করতেন তখন লঞ্চ বা স্টিমারে করে আসতেন। এই স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য দুইটি ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সমাধি দেখতে আসা মুজিবভক্তরা যাতে জানতে পারে বঙ্গবন্ধু গ্রামের ছেলে হয়ে কিভাবে ঢাকায় যাতায়াত করতেন।”
  
গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এহসানুল হক বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য পাটগাতি ও টুঙ্গিপাড়ার খাদ্য গুদামের পাশে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দুইটি ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের উদ্বোধন কর হবে।”

Link copied!