• ঢাকা
  • বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩০, ১৩ শা'বান ১৪৪৬

গণপরিবহন চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ


রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২১, ০৭:৫৮ পিএম
গণপরিবহন চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ

চলমান লকডাউনে আগামীকাল  রোববার (১ আগস্ট) থেকে শিল্পকারখানা ও গার্মেন্টস স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করার সংবাদে কর্মস্থলে যোগ দিতে হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

লকডাউনের কারণে যাত্রীবাহী বাস চলাচল না করায় মোটরসাইকেল, বিভিন্ন ধরনের থ্রি-হুইলার  ট্রাক-পিকআপ বা মাইক্রসহ পণ্যবাহী যানবাহনে নানা কৌশলে যাত্রীরা রাজধানী ঢাকার দিকে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তায় অপেক্ষার পরও মিলছে না গাড়ি। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তারা।

শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মডার্ন মোড়ে এই চিত্র দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের ওই এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। রাজধানীর পোশাক কলকারখানার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া হাজারো শ্রমিক বিক্ষোভে অংশ নেয়। অবরোধে জরুরি পরিষেবার পরিবহন ছাড়াও লকডাউন কার্যকরে পুলিশ বিজিবি ও সেনাবাহিনীর গাড়িগুলোও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকিয়ে রেখে পরিবহণ সচল নয়তো পোশাক কারখানার ছুটি বাড়ানোর দাবি জানান শ্রমিকরা। দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টার অবরোধে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার মর্ডান মোড় হতে দুই দিকে প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তা বিধিনিষেধের আওতামুক্ত পরিবহনের তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

নিলফামারীর জলঢাকা থেকে স্ত্রীসহ উত্তরার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন গোলাম রসুল। গতকাল (৩০ জুলাই) হটাৎ অফিস থেকে খবর আসে রোববার (১ আগস্ট) থেকে খোলা অফিস। অনেক কষ্ট করে অটো রিজার্ভ নিয়ে জলঢাকা থেকে রংপুর আসেন এই দম্পতি, রংপুরে আসার পর ঢাকার কোনো গাড়ি না পাওয়ায় দুর্ভোগে পরেন তারা।

এসময় গোলাম রসুল সংবাদ প্রকাশকে বলেন,“হামরা বাচি মরি তাতে কার কি যায় আইসে। সরকার হামাক মানুষে মনে করে না। একপালা টাকা খরচ করি ঈদের আগত আসনো। গাড়ি ঘোড়া বন্ধ থুইয়া কাইল আবার অফিস খুলি দেইল। এখন যাবার পথ তো নাই, না গেইলে চাকরি থাকপে না।”

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার নাগেরহাট থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য মডার্ন মোড়ে এসেছেন শামিম মিয়া। শামিম ঢাকার ফ্যাশন ফ্লাশ লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। আজ (শনিবার) ঘরোয়া ভাবে বিয়ে করার কথা ছিল তার। কিন্তু হটাৎ অফিস খুলে দেয়ায় বিয়ে বাতিল করেই ঢাকার উদ্দেশ্য ছুটছেন এই তুরুন।

এসময় শামিম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ‍‍‍‌‌“এবার কয়েকদিন বেশি ছুটি পাওয়ার কারণে পরিবার থেকে বিয়ে ঠিকে করে, কথা ছিলো আজ কোন অনুষ্ঠান ছাড়া ঘরোয়াভাবে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করব, কিন্তু গতকাল অফিস থেকে ফোন আসে রোববার (১ আগস্ট) সকাল ৮টার মধ্যে কারখানায় উপস্থিত হতে হবে। সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে না পারলে বকেয়া বেতন পাওয়া যায় না তাই বাধ্য হয়েই বিয়ে বাতিল করে যেতে হচ্ছে।”

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সেখানে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ শ্রমিকদের কোনভাবেই বোঝাতে পারছিলেন না। অবশেষে পুলিশ ঢাকা থেকে ঈদের আগে রংপুরে আসা দোতালা বিআরটিসি বাসে শ্রমিকদের যাতায়াতের বন্দোবস্ত করে দিলে বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ তারা অবরোধ তুলে নেন। 

এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার অপরাধ আবু মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার কারণে পোশাক শ্রমিকদের ঢাকায় ফিরে যাওয়ার ব্যাপারটি সরকারের নজরে আসে। শ্রমিকরা সকাল থেকে অবরোধ করেছেন। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ঈদের আগে ঢাকা থেকে রংপুরে আসা দ্বিতল বিআরটিসি বাসগুলোতে তাদেরকে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেই। এরপর তারা অবরোধ তুলে নেন এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে কাজ করে এমন অন্তত ৬৫ ভাগ শ্রমিকের বাড়ি রংপুর ও আশপাপের জেলাগুলোতে। লকডাউনে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকার কলকারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়ায় ঈদের সময় তারা গ্রামের বাড়িত এসেছিলেন।

Link copied!