• ঢাকা
  • বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩০, ১৩ শা'বান ১৪৪৬

পারকি সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের মূল আকর্ষণ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২১, ০৪:৪৯ পিএম
পারকি সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের মূল আকর্ষণ

ভ্রমণপ্রেমীদের নতুন আকর্ষণ এখন ক্রেন ‘তিয়ান-ই’ ও ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ জাহাজ। প্রকৃতির রূপসী কন্যা নামে পরিচিতি চট্টগ্রাম আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকত।

আর এই সৈকতের তীরে এসে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের কোটি মানুষের মাঝে স্বপ্ন দেখানো পদ্মাসেতুর স্প্যান বসানোর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধারণক্ষমতার ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই।

অপর দিকে  ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাত থেকে রক্ষা পেতে কূলে এসে আটকা পড়েছে ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’  জাহাজ। এছাড়াও পারকি সৈকতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হোটেল রেস্তোরাঁ। পর্যটকদের কাছে টানতে পর্যটন উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ করছে সরকার।

সাম্প্রতিক সময়ে পারকি সমুদ্র সৈকতের পর্যটকদের কৌতূহল শেষ নেই, ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই  এবং ক্রিস্টাল গোল্ড  জাহাজ নিয়ে। ভ্রমণপ্রেমীদের দারুণভাবে কাছে নিয়েছে ক্রেন তিয়ান-ই। অপর দিকে ক্রিস্টাল গোল্ড বাড়িয়ে দিয়েছে পর্যটকদের কৌতূহল। পর্যটকদের ছবির কবিতা যেন ক্রেন তিয়ান-ই ও ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজ।

জানা যায়, ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই চীনের তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ভাসমান ক্রেন-বাহী জাহাজ  তিয়ান-ই  পদ্মা সেতুর প্রকল্পের স্প্যান বসানোর ২০১৭ সালের মার্চ মাসে আনা হয়েছিল। সে বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম স্প্যান থেকে চলতি বছরের গত ১০ ডিসেম্বর সেতুর ৪২টি পিয়ারে ৪১টি স্প্যান বসানোর কাজ করে ক্রেনটি।

চীনে তৈরি ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার বিশেষ ধরনের এই ভাসমান ক্রেনটির দাম আড়াই হাজার কোটি টাকা। কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্রেনটি পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। ১৩ ডিসেম্বর রোববার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বন্দরের থেকে পারকী সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি অবস্থান করেন। এক মাস অবস্থান করে,  চট্টগ্রাম বন্দরে থেকে সেটি হংকং হয়ে চীনে পাড়ি জমাবে।

মাওয়া থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ক্রেনটির যাত্রা নিরাপত্তায় ছিল পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। সেখান থেকে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স শেষে বড় মাদার ভেসেলে সেটি হংকংয়ের উদ্দেশে রওনা হবে। এটি চীন পৌঁছাতে এক মাসেরও অধিক সময় লাগবে।

ক্রিস্টাল গোল্ডের অজানা তথ্য থেকে বেরিয়ে আসে তার করুণ কাহিনী। সৈকতে নেমেই একটি বিশাল দৈত্যাকার জাহাজ স্বাগতম জানাবে আপনাকে। পারকি সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের আরেক আকর্ষণ দানবাকার ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজ। পর্যটকরা জাহাজকে ঘিরে সেলফিতে ব্যস্ত থাকে সারাক্ষণ।

জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানায়, এই বিশাল দৈত্যাকার জাহাজ ভারতের কলকাতা থেকে আটলান্টিকের উদ্দেশ্য ছেড়েছিল। ২০১৭ সালের ৩০ মে দুপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে নাবিক ধরে রাখতে না পারায় বাতাসের বেগ পারকি উপকূলে তুলে দিয়েছিল জাহাজটিকে। সেই হতে জাহাজটি আটকে আছে বিচের বালুকায়। একটা সময় প্রশান্ত, আটলান্টিক, ভারত মহাসাগর চষে বেড়ানো সেই ক্রিস্টাল গোল্ড আজ পারকি সৈকতে আসা প্রতিটা পর্যটককে হাসিমুখে স্বাগতম জানায়। 

ক্রিস্টাল গোন্ড জাহাজটি সৌন্দর্যের রূপ দেখে আশিকুর রহমানের পরিচালিত বাংলা ছবি ‘সুপার হিরো’র শুটিং ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম আনোয়ারা উপজেলায় পারকি সমুদ্র সৈকতের জাহাজটি ঘিরে ছবি বিভিন্ন শুটিং ধারণ করেন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যঘেরা পারকি সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার পথে দেখা মিলে অন্যরকম এক দৃশ্য। আঁকা-বাঁকা পথ ধরে ছোট ছোট পাহাড়ের দেখা মিলে। চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লি. (সিউএফল) এবং কাফকোর মনোরম দৃশ্যও পর্যটকদের প্রাণ জুড়ায়। পারকি বিচে ঢুকার পথে সরু রাস্তার দুপাশে সারি সারি গাছ, সবুজ প্রান্তর আর মাছের ঘের দেখা যায়। বিচে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো অসংখ্য ঝাউ গাছ আর ঝাউবন রয়েছে। রয়েছে ঘোড়ায় উঠা, রাইডিং বোট, বসার জন্য বড় ছাতাসহ হেলানো চেয়ারের মতো সুন্দর ব্যবস্থা।

চট্টগ্রাম শহর থেকে পারকি বিচের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিমি। যেতে সময় লাগবে এক ঘণ্টা। এটা মূলত কর্ণফূলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এবং পূর্ব-দক্ষিণ তীরে পারকি সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম সার কারখানা ও কাফকো যাওয়ার পথ ধরে এই সৈকতে যেতে হয়।

পারকি বিচের ১৩ একর জায়গায় আধুনিক পর্যটকের কমপ্লেক্স বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (বিপিসি)। ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে এখনো কাজ চলমান। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পারকি বিচ পরিণত হচ্ছে দেশের অন্যতম একটি আধুনিক বিনোদন কেন্দ্রে।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, পারকি বিচকে আধুনিক বিচ ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পর্যটন কর্পোরেশন তিন বছর মেয়াদি ‘পারকি বিচে পর্যটন সুবিধাদি প্রবর্তন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পটির মধ্যে রয়েছে ১৪টি বহুতল বিশিষ্ট আধুনিক কটেজ, একটি মানসম্মত বার, দুটি পিকনিক শেড, দুটি কিডস কর্নার জোন, আধুনিক রেস্তোরাঁ, কনভেনশন হল নির্মাণ, চেঞ্জিং ক্ল-সেট ও ওয়েটিং রুম এবং কার পার্কিং জোন সুবিধাও রাখা হয়েছে।

Link copied!