এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ রয়েছে বাংলাদেশে। ঠাকুরগাঁওয়ে এটি অবস্থিত। ঐতিহ্যবাহী এই আমগাছটি ২০০ বছরের পুরোনো, যার নাম সূর্যপুরী আমগাছ।
ভারতের সীমান্তবর্তী উপজেলা বালিয়াডাঙ্গীর হরিণমারী (নয়াপাড়া) গ্রামে আলোচিত এই আমগাছটির অবস্থান। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আজও। প্রায় ২ দশমিক ৫ বিঘাজুড়ে বিস্তৃত এই গাছটি। উঁচু প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ফুট এবং এর পরিধি প্রায় ৩৫ ফুট। প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে উঠেছে গাছটি। বিশালাকৃতি গাছটি দেখে মনে হবে এটি বিশাল একটি ঝাউগাছ।
গাছটির অদ্ভুত দিক হলো এর ডালগুলো। মূল কাণ্ড থেকে ডাল বেরিয়ে একটু ওপরে উঠে আবারও তা মাঠিতে নেমে গেছে। তারপর আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওপরে উঠেছে। দেখতে অনেকটা নদীর ঢেউয়ের মতো উঁচু-নিচু।
গাছের মূল কাণ্ড থেকে বেরিয়েছে ২০টির মতো শাখা। শাখাগুলোর দৈর্ঘ্য ৪০ থেকে ৫০ ফুটের মতো।
স্থানীয়রা জানান, ঐতিহ্যবাহী গাছটি দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে অনেক পর্যটক এখানে ভিড় করেন। সূর্যপুরী জাতের এত বড় আমগাছটি দেখার জন্য় টিকিটও কাটতে হয় দর্শনার্থীদের। জনপ্রতি ২০ টাকা করে টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। টিকিট বিক্রির টাকা দিয়েই হয় গাছটির পরিচর্যা।
বিশাল আকৃতির গাছটির বর্তমান মালিক স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুর রহমান ও নূর ইসলাম। তারা দুই ভাই। গাছটির কথা জানতে চাইলে তারাও সঠিক বয়স বলতে পারেননি। তবে গাছটির বয়স প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো হবে ধারণা তাদের।
সূর্যপুরী গাছের মালিক সাইদুর রহমান বলেন, “গাছটি আমার বাবার দাদার (প্রপিতামহ) লাগানো। বংশপরম্পরায় পরিবারের সদস্যরাই এটির দেখাশোনা করে আসছে।”
মালিক নূর ইসলাম জানান, পুরোনো হলেও গাছটি এখনো বাম্পার ফলন দেয়। প্রতিবছর গাছটি থেকে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মণের বেশি আম পাওয়া যায়। এগুলো অন্য আমের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রিও হয়। গাছের পাশেই আম বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে।
আমের মৌসুমে দর্শনার্থীরা এখানে এসে গাছটি দেখতে পারেন। সেই সঙ্গে গাছের আম কেনার সুযোগও পান। ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা গাছ দেখে মুগ্ধ হন। তবে অভিযোগও করেন চারপাশের পরিবেশ নিয়ে।
সুনামগঞ্জ থেকে যাওয়া এক দর্শনার্থী বলেন, “গাছটির ডালপালা অনেক বিস্তৃত। দেখতে অদ্ভুত সুন্দর। তবে চারপাশের পরিবেশ খুব একটা ভালো না। খাওয়ার মতো তেমন কোনো ভালো হোটেল নেই, বিশ্রামের জায়গাও নেই। চারপাশ উন্নত হলে এই স্থানটি দেখতে আরও পর্যটকরা আসবেন।”
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল বলেন, “গাছটি জেলার একটি ঐতিহ্য। এলাকাটিকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছি। আশা করছি, বরাদ্দ পেলে সৌন্দর্যবর্ধন করতে পারব।”
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে বালিয়াডাঙ্গীর দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। রানীশংকৈল থেকে ৩০ কিলোমিটার আর বালিয়াডাঙ্গী থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার।
ঢাকা থেকে ঐতিহ্যবাহী গাছটি দেখতে কীভাবে যাবেন? ঢাকা থেকে প্রথমে হানিফ, শ্যামলী, নাবিল, তাজসহ বিভিন্ন পরিবহনে ঠাকুরগাঁও যেতে হবে। ট্রেন ভ্রমণ করতে চাইলে লালমনিরহাট বা ঠাকুরগাঁও রুটে চলাচলকারী ট্রেনে উঠে পড়ুন। বাসভেদে ভাড়া পড়বে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। আর ট্রেনে ৬৫০ থেকে ১৬০০ টাকায় যাওয়া যাবে।
বিমানে যেতে চাইলে ৩৬০০ টাকায় সৈয়দপুর পর্যন্ত যেতে হবে। এরপর সৈয়দপুর থেকে বাসে ১০০ টাকা ভাড়া পড়বে গন্তব্যে পৌঁছাতে। গাছটি দেখার জন্য় ২০ টাকায় টিকিট কাটুন। খাওয়া-দাওয়া এবং থাকার জন্য শহরে ফিরতে হবে।