• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিশুদের মেধাবিকাশে বাধা দিচ্ছে স্মার্টফোন ও ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২, ০৫:১১ পিএম
শিশুদের মেধাবিকাশে বাধা দিচ্ছে স্মার্টফোন ও ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট

একটা সময় ছিল যখন শিশুর জন্মের পর থেকেই বাবা-মা গল্প বলে কিংবা গান গেয়ে তাদের ঘুম পারাতেন। টয়লেট ব্যবহার থেকে শুরু করে কথা বলা, হাত ধরে লিখতে পড়তে শেখাতেন পরিবারের সদস্যরা। তবে ইন্টারনেটের বদৌলতে এসব ক্ষেত্রে এখন মানুষের ভূমিকা পালন করছে নানা প্রযুক্তি বা ইলেক্ট্রনিক পণ্য।

জন্মের পরদিন থেকেই বাচ্চাদের লালনপালন করতে সহায়তা করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইস। তবে এসব স্মার্ট ডিভাইসে ব্যবহৃত ভয়েস-অ্যাসিস্ট্যান্ট একদিকে যেমন গুগল হোম, অ্যামাজনের অ্যালেক্সা কিংবা অ্যাপলের সিরি একদিকে যেমন শিশুদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করছে, অন্যদিকে তাদের সামাজিকীকরণ ও মেধা বিকাশের উপর দীর্ঘমেয়াদী বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে শিশুদের সহানুভূতি, মানবিক গুণাবলি ও গঠনমূলক চিন্তার দক্ষতা কমিয়ে দিতে পারে এসব আধুনিক প্রযুক্তি। শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ক সাময়িকী আর্কাইভস অফ ডিজিজ ইন চাইল্ডহুড প্রকাশিত এক গবেষণায় এসব তথ্য তুলে ধরেছেন গবেষকরা।

গবেষক আনমোল অরোরা যেমনটা বলছেন, “শিশুদের উপর এসব ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের বিরূপ প্রভাবের মধ্যে প্রতিক্রিয়া বা অনুভূতি প্রকাশে অপারগতা, সামাজিক বিকাশে বাধা ও তাদের শেখার আগ্রহকে বাধাগ্রস্ত করা উল্লেখযোগ্য। বড় উদ্বেগের ব্যাপার হল ডিভাইসগুলো শিশুদের মানবিক বৈশিষ্ট্য ও আচরণগুলোকেও প্রভাবিত করছে।”

গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই খুব ছোটবেলা থেকে স্মার্টফোনের মত ডিভাইসকে অনুকরণ করে। তাই একসময় তারা কণ্ঠের স্বর পরিবর্তন, জোরে বা আস্তে কথা বলার পার্থক্য বা কথার মাধ্যমে নিজের আবেগ প্রকাশে ব্যর্থ হয়। আরেকটি সমস্যা হল, এসব যন্ত্র শিশুদের ভদ্রতা করে কাউকে অনুরোধ করা (ইংরেজি ভাষায় প্লিজ বলা) বা সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ (থ্যাংকস) দিতেও শেখায় না।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলো শিশুদের প্রশ্নের যে ধরণের উত্তর দিচ্ছে সেগুলোর তথ্যের গভীরতাও সীমিত। ফলে বাস্তবে শিশুরা ঠিকভাবে নিজের প্রশ্নগুলো করতে পারছে না। তারা কেবল সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতেই প্রশ্ন করছে। কোন কিছু জানার বা উপলব্ধি করার চাহিদা অনুভব করতে পারছে না।

এক সমীক্ষায় ড. অ্যাডাম মিক্লোসি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট শিশুদের মস্তিষ্ককে আরও নানবিধ দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে।  গবেষণাপত্রে একটি ১০ ​​বছর বয়সী মেয়ের উদাহরণ উদ্ধৃত করা হয়েছে, যার কাছে একটি বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে একটি মুদ্রা স্পর্শ করালে তাঁর কি ক্ষতি হবে তা জানতে চাওয়া হলে সে কিছুই বলতে পারেনি।

গবেষকরা আরও বলেন, অনেক সময় একই ধরণের কণ্ঠ বা উপভাষা শোনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়লে কারও ভাষায় উচ্চারণ বা আঞ্চলিকতার রেশ থাকলেও শিশুরা সেটা ধরতে পারে না। বিশেষত অল্পবয়সে যেসব শিশুরা প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ে, একটু বড় হওয়ার পর তারা অনেক শব্দ সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে সক্ষম নাও হতে পারে। তাই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো কোম্পানিগুলোকে এসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে আহ্বান জানান গবেষকরা।

Link copied!