• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

নতুন সরকারের কাছে পুরোনো প্রত্যাশা


রেজাউল করিম হীরা
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৪, ০৭:০৭ পিএম
নতুন সরকারের কাছে পুরোনো প্রত্যাশা
সংবাদ প্রকাশ গ্রাফিক্স

দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থ জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করেছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী দলটি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। এর মধ্যদিয়ে নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হলো।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই সরকারের কাছে এখন জনআকাঙ্ক্ষা সবচেয়ে বেশি। কারণ, ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য। দিন বদলের সনদ নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে গত ১৫ বছরে বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। স্বাধীনতার পর আর কোনো সরকারের আমলে দেশে এত উন্নয়ন হয়নি। শুধু উন্নয়নই নয়,দেশকে ডিজিটালাইজড করা থেকে শুরু করে অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে নানা ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরাট সাফল্য। এই সেতু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দুঃখ ঘুচেছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে দিয়েছে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির আরেক দুয়ার। ঢাকাবাসীর নিত্য দুর্ভোগ যানজট থেকে মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। দেশজুড়ে সড়ক প্রশস্তকরণের মধ্যদিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন।

শেখ হাসিনা সরকারের আরেক সাফল্য রেল যোগাযোগে। পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো রেল সেবার আওতায় আনা হয়েছে। পর্যটন শহর কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করে দেশজুড়ে যোগাযোগের আরও এক নতুন দ্বার উম্মোচন হয়েছে।

বিদ্যুৎ খাতে হয়েছে বিস্ময়কর উন্নয়ন। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে দেশের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। স্থাপন করা হয়েছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এছাড়া নতুন সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণসহ বহু উন্নয়ন ঘটেছে গত ১৫ বছরে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়ন দেশ-বিদেশে বহু প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ব দরবারে বাঙালি জাতিকে দিয়েছে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর এক গর্বিত শক্তি।

কৃষিতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করা আওয়ামী লীগ সরকারের আরেকটি বড় সাফল্য। ভূমিহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধা নিবাস নির্মাণ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তার আওতায় নিয়ে আসাসহ রয়েছে আরও নানামুখী জনবান্ধব উন্নয়ন।

তবে এত উন্নয়ন এবং জনবান্ধব কর্মকাণ্ডের পরও জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে একটা বড় ঘাটতি রয়েই গেছে। এখন সবার চাওয়া হলো ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির সফল বাস্তবায়ন। জোর দিতে হবে সুশাসনের ওপর। কঠোর হস্তে দমন করতে হবে সন্ত্রাস, রাহাজানি আর মাদকের আগ্রাসন। প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এই সরকারকেই।

২০১৪ ও ২০১৮ সালে সাধারণ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছিল দেশকে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত করা। ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন।

তার পরও দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল হওয়া তো দূরের কথা, তার লাগাম পর্যন্ত টেনে ধরা যায়নি। সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি একটা ব্যধির মতো রূপ নিয়েছে। দুর্নীতির লাগাম টেনে না ধরলে ভবিষ্যতে দেশকে চড়া মূল্য দিতে হবে। তাই এই মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকারের কাছে মানুষের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা হচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

শেখ হাসিনা সরকারের টানা ১৫ বছরের মেয়াদে বাজার ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে খারাপ সময় গেছে গত দুই বছরেরও বেশি সময়। এই সময়ে মানুষ অভাবনীয় সংকটে পড়েছে নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল থেকে শুরু করে শেষ বেলায় পেঁয়াজ, আলুর মতো পণ্যের দামও ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের পকেট কাটা গেছে প্রতিদিন। এসব মানুষেরর একটাই বক্তব্য ছিল- উন্নয়ন করেন  ভালো কথা, কিন্তু সবার আগে মানুষকে খেয়ে-পরে বাঁচতে দিন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করেন। বাজারের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরেন। কিন্তু মানুষের এই আর্তনাদ সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে ঠিকমত পৌঁছায়নি। সবার একটাই চাওয়া নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন।

বাজারের এই দুরাবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলো। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আবার নতুন সরকার গঠন হলো। আমরা শুভকামনা জানাই। তবে সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জটা সবচেয়ে বড়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা, মানুষকে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া, সুশাসন নিশ্চিত করাই অন্যতম কাজ। এছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে স্বস্তি দেওয়াটা আরও বড় কাজ। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে এর নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে। সেসব সিন্ডিকেটের কোমর ভেঙে দিতে হবে। কারণ এই সিন্ডিকেটই প্রিয় জনতার পকেট লুটেছে টানা দুই বছর। তাদের উচ্চমূল্যের মুনাফার লোভ নাভিম্বাস তুলেছে সর্বসাধারণের। সাধারণ মানুষ মনে করে এবারই তাদের কোমড় ভেঙে দফারফা করবেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।

এজন্য দরকার সংশ্লিষ্টদের সুনজর। সিন্ডিকেট, দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের কঠোর হস্তে দমন করে নতুন সরকার এবার পুরণ করবে জনগণের পুরোনো প্রত্যাশা।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক, দৈনিক বাংলাদেশের খবর

Link copied!