• ঢাকা
  • সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের তিন খাতে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ১১:৪৫ এএম
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের তিন খাতে
ছবি: সংগৃহীত

শুরু হয়েছে ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ। আর এ যুদ্ধে প্রভাব ফেলতে পারে বাংলাদেশের তিন খাতে। দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা এসব কথা বলেন।  তাদের মতে, ইরান ও ইসরায়েল দুই দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সরাসরি অর্থনৈতিক সম্পর্ক খুব বেশি নেই। তবে এই যুদ্ধ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। আর যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তিনটি খাতে প্রভাব পড়বে।

প্রথমত, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সব খাতে প্রভাব পড়বে। দ্বিতীয়ত, প্রভাব ফেলবে বৈদেশিক শ্রমবাজারে। সর্বশেষ হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে জ্বালানি খাতসহ পুরো আমদানি পণ্য সরবরাহে প্রভাব পড়বে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে ইরানে আকস্মিক হামলা চালায় ইসরায়েল। জবাবে পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইরান। ইতিমধ্যে তারা হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে। এই হরমুজ প্রণালি একটি সরু জলপথ, যা পশ্চিমের পারস্য উপসাগরকে পূর্বে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এই পথটি ইরানের নিয়ন্ত্রণে। আন্তর্জাতিকভাবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খনিজ তেলবাহী জাহাজ যাতায়াতের এটিই একমাত্র পথ। এ ছাড়া এটি বন্ধ হলে সব ধরনের আমদানিতে প্রভাব ফেলবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের মোট আমদানির ৩০ শতাংশই তিন ধরনের পণ্যে। এর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি তেল, খাদ্য ও সার। এই পণ্যগুলোর অধিকাংশই হরমুজ প্রণালি দিয়ে আমদানি হয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য খুব সামান্য।

২০০৬ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ ও ইরান একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে এরপরও সম্পর্ক খুব বেশি এগোয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অংশই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আবর আমিরাত, কাতার ও ওমানের মতো দেশগুলোর সঙ্গে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য অস্থির হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরী বলেন, ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তবে এই যুদ্ধ শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইতিমধ্যে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছে। আর বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে এই যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে এই প্রভাবের গভীরতা নির্ভর করবে, যুদ্ধ কতটা দীর্ঘ স্থায়ী হয় তার ওপর।

মুজেরী বলেন, এখানে কয়েকটি শঙ্কা আছে। প্রথমত, বাংলাদেশ জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরশীল। এসব জ্বালানি মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি হয়। এর মধ্যে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) এবং ক্রুড অয়েল (অশোধিত তেল) অন্যতম।

দ্বিতীয় বিষয় হলো শ্রমবাজার। বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করেন। গত কয়েক মাসে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, এতে বড় কৃতিত্ব রেমিট্যান্সের (প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ)। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য অস্থির হলে রেমিট্যান্স কমবে। এটি দেশের অর্থনীতিতে বড় আঘাত করবে।

তৃতীয়ত, ইতিমধ্যে হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে ইরান। এটি বন্ধ হলে তেল সরবরাহে প্রভাব পড়বে। এর ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে। বাড়বে পরিবহন ভাড়া, পণ্যের উৎপাদন খরচ। মূল্যস্ফীতিতেও প্রভাব ফেলবে। 

এ ছাড়া সরকার জ্বালানি তেলের যে মূল্য সমন্বয়ের চেষ্টা করছে, সেটিও বন্ধ হয়ে যাবে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে যুদ্ধ কতদিন দীর্ঘস্থায়ী হয়, তার ওপর।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ইরান ও ইসরায়েল দুই দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সরাসরি খুব বেশি অর্থনৈতিক সম্পর্ক নেই। ইসরায়েলের সঙ্গে একেবারেই নেই। ইরানের সঙ্গে কিছুটা আছে। তবে সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক যুদ্ধ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আজিজুল আরও বলেন, এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো-জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাবে। যেহেতু বাংলাদেশ জ্বালানি তেল আমদানির ওপর নির্ভরশীল। দেশে আমদানি পণ্যের অধিকাংশই জ্বালানি তেল, তাই পণ্যটির দাম বাড়লে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। দ্বিতীয় বিষয় হলো শ্রমবাজার। এখানে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। 

কারণ, ইসরায়েল বাংলাদেশের শ্রমিক না থাকলেও ইরানে কিছু আছে। তবে এই দুই খাতেই সরাসরি প্রভাবের আশঙ্কা কম। তিনি আরও বলেন, এই যুদ্ধে বাংলাদেশ কোন পক্ষকে সমর্থন করবে, সেটি একটি প্রশ্ন। সে ক্ষেত্রে ইসরায়েলকে সমর্থন করার প্রশ্নই আসে না। তবে মুসলিম দেশ, এই বিবেচনায় ইরান কিছুটা সহানুভূতি পেতে পারে।

Link copied!