আগামী ৭ অক্টোবর (শনিবার) আংশিক উদ্বোধন হবে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনাল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনী এই অনুষ্ঠানে ব্যাপক শোডাউন দিতে চায় টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দুই লাখ লোকের সমাগমের মধ্য দিয়ে মূলত নির্বাচনী শোডাউন করার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয়, ৭ অক্টোবর সরকারের টানা তিন মেয়াদের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরতে রাজধানীর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সমাবেশের কারণে রাজধানী ও আশপাশের জেলায় দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা আরো উজ্জীবিত হবেন। এরইমধ্যে সড়ক-মহাসড়কে ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে শোভিত করতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, ৭ অক্টোবর বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে পুরো এলাকা উৎসবের নগরীতে পরিণত হবে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বের কারণে দল-মত নির্বিশেষে লোকে লোকারণ্য হবে অনুষ্ঠানস্থল। আমরা আশা করছি, দল-মত নির্বিশেষে এই জনসভায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারে এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতেই এমন উদ্যোগ।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে জনসমাগমের বিষয়টি নিয়ে নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। ওই সমাবেশে তিনি বলেন, আজ এখানে আপনাদের যে উপস্থিতি, আগামীদিনেও আমরা এটি দেখতে চাই। আগামী ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন। সেখানে আপনারা চলে আসবেন। দুই লাখ লোক সমাগমের জন্য হাবিব (ঢাকা ১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসান) ভাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সমাবেশ শেষে নিজ এলাকার নেতাকর্মীদেরও একই নির্দেশনা দেন ঢাকা ১৮ আসনের সংসদ সদস্য হাবিব হাসান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা চলছে। দলের পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্ত পেয়েছি সেটি শতভাগ বাস্তবায়িত হবে।
তিনি বলেন, “আমার নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩ তারিখ উত্তরায় এ বিষয়ে একটি সভা হবে। আশা করছি, যে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, তার চেয়েও বেশি লোক সমাগম হবে।”
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আরিফুল ইসলাম রাসেল বলেন, “জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিগত ১৫ বছরের উন্নয়নের যে চমক দেখিয়েছেন, স্বাধীনতা পরবর্তীতে কোনো সরকার তা পারেননি। আগামী ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন ও সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নির্দেশে সকল থানা-ওয়ার্ড নেতাদের শোডাউনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা বলেন, “যুবলীগের ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সাংগঠনিক থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট থেকে প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মী এ সমাবেশে যোগ দেবেন, এমন প্রস্তুতি তারা নিচ্ছেন।”
তবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন সোহেল বলেন, “আগামী ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন পরবর্তী সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ দিতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
এক নজরে তৃতীয় টার্মিনাল
২০১৭ সালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এরপর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ৩০ লাখ বর্গফুট জায়গায় তিনতলা বিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির আয়তন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার, দৈর্ঘ্য ৭০০ মিটার ও চওড়ায় ২০০ মিটার। ভবনটির নকশা করেছেন রোহানি বাহারিন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুরের স্থপতি। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনে প্রথম পর্যায়ে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। পরবর্তী পর্যায়ে আরও ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন করা হবে। বহির্গমনে মোট ১১৫টি চেক-ইন-কাউন্টার থাকবে, এর মধ্যে ১৫টি থাকবে সেলফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টার। আগমনী লাউঞ্জে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট চেক ইন কাউন্টার থাকবে। এ ছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ মোট ৬৬টি ডিপার্চার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানে প্রায় ১২৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের ভেতরেই ডিভিআইপি ও ভিআইপিদের জন্য সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন আলাদা নির্ধারিত অংশ থাকবে। শুধু তৃতীয় টার্মিনাল দিয়ে বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মাণ শেষ হলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বছরে প্রায় দুই কোটি যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।
শাহজালাল বিমানবন্দরের উত্তর পাশে রয়েছে রপ্তানি ও আমদানি কার্গো ভিলেজ। বর্তমান কার্গো ভিলেজের উত্তর পাশে যথাক্রমে ৩৬ হাজার বর্গমিটার ও ২৭ হাজার বর্গমিটার আয়তনের সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন দুটি পৃথক আমদানি ও রপ্তানি কার্গো ভিলেজ নির্মাণ করা হবে।
তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে, যার মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ ব্যবস্থা থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালে থাকবে অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক মানের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। পাশাপাশি লাউঞ্জ, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক যাত্রীসেবার সুবিধা রাখা হবে।
এছাড়া এর টার্মিনাল ভবনে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের (এডিসি) মাধ্যমে জাপানের মিৎসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসাং টার্মিনালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করছে।