জামায়াতে ইসলামীর জোট আসন না ছাড়ায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। দুজনই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দেননি।
এদিকে লক্ষীপুর-১ আসনে জামায়াত জোটের প্রার্থী হচ্ছেন মাহফুজ আলমের ভাই মাহবুব আলম। ঢাকা-১০ আসনে প্রার্থী হতে চাওয়া আসিফ মাহমুদ এনসিপিতে যোগ দিয়ে দলটির মুখপাত্র হয়েছেন।
গত বুধবার জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনের আলোচনা শুরু করে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের গড়া এনসিপি। সেদিন জামায়াত জানিয়ে দেয়, জোট হলেও সাবেক দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে প্রার্থী করা হবে না।
জোট সূত্র জানায়, জামায়াত জোট যেন আসিফকে ঢাকা-১০ আসন ছেড়ে দেয়; এ জন্য রোববার রাত পর্যন্ত চেষ্টা চালায় এনসিপি। তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ আলোচনায় তারা অংশ নেবে না।
এনসিপিকে ৩০ আসন ছেড়েছে জামায়াত। এর অধিকাংশে জামায়াতের নেতারা, আজ সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন।
এনসিপি ৪৭ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। একটি আসনে দুইজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। মাহফুজ আলম রোববার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে জানান নির্বাচনে অংশ নেবেন না।
গত ১০ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করেন অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা মাহফুজ এবং আসিফ। যদিও মাহফুজ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সরকারে থাকতে চেয়েছিলেন। নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া আসিফ জানিয়েছিলেন, তপশিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করবেন। আজ এনসিপিতে যোগ দিয়ে তিনি জানান, নির্বাচন করবেন না।
যেসব কারণে জামায়াত আসন ছাড়েনি
দুই সাবেক উপদেষ্টাকে প্রার্থী না করার বিষয়ে জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন, তারা দায় নিতে চাননি। জামায়াতের দুইজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, প্রার্থী করলে দুই উপদেষ্টার ‘বিতর্কিত’ কাজের দায় পড়বে জামায়াত-এনসিপি জোটের ওপর।
আবার দুই সাবেক উপদেষ্টা এবং তাঁদের অনুসারীরা জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিরোধী ছিলেন। দুই উপদেষ্টা বিএনপির সঙ্গে জোটে আগ্রহী ছিলেন। তারা বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন; এমন গুঞ্জনও ছিল। তবে বিএনপি সূত্র জানায়, তারাও শেষ পর্যন্ত মাহফুজ-আসিফকে প্রার্থী করতে রাজি হয়নি।
দুই সাবেক উপদেষ্টা প্রার্থী হতে না পারলেও তাঁদের রাজনৈতিকভাবে ‘মূল্যায়ন’ করার কথা জানিয়েছেন এনসিপি নেতারা। একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, মাহফুজের পরিবর্তে তাঁর ভাইকে জোটের প্রার্থী করা হয়েছে। আসিফকে এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এতদিন এই দায়িত্বে ছিলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
আসন বণ্টন আলোচনার দায়িত্বে থাকা জামায়াত নেতারা বলেছেন, একজন সাবেক উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠেছে। সেগুলো সত্য-মিথ্যা যাই হোক, তাঁকে জোটের প্রার্থী করলে দায় নিতে হবে। আরেকজন উপদেষ্টা থাকাকালে মওদুদীর মতবাদসহ নানা বিষয়ে জামায়াতকে লাগাতার আক্রমণ করেছেন। তাঁকে প্রার্থী করলে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে খারাপ বার্তা যেত।
জামায়াত নেতাদের মূল্যায়ন, দুই সাবেক উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসনের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাদের জোটের প্রার্থী করলে এর দায় জামায়াতকে নিতে হবে। সাবেক উপদেষ্টাদের প্রার্থী করলে সরকারের মদদপুষ্ট হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পাশপাশি সরকারি শক্তির বিরোধিতার মুখে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা নির্বাচনে ক্ষতি করবে।






























