• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
মেয়র আনিসুল হক সড়ক

আবারও দখলের কবলে বেহাল!


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২২, ০৯:৫৯ পিএম
আবারও দখলের কবলে বেহাল!

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মেয়র আনিসুল হক সড়ক। ২০১৫ সালে সড়ক থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে নিজের স্বপ্নের মতো সাজিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক। তার মৃত্যুর পর ফের দখলদারদের হাতে চলে যায় সড়কটি। পরবর্তীকালে ২০১৮ সালে সড়কটি ডিএনসিসি আবার দখলমুক্ত করে আনিসুল হকের নামে করে। বর্তমানে সড়কটিতে শুধু স্মৃতি হিসেবে ‘মেয়র আনিসুল হক সড়ক’ নাম ফলকটি আছে। কিছুদিন পর পর উচ্ছেদ অভিযান চালালেও ফের রাস্তা দখল করে রাখা হয় ট্রাক দিয়ে। ফলে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালালেও থামছে না আনিসুল হক সড়কে ট্রাক স্ট্যান্ডের দৌরাত্ম্য।

সরেজমিনে সড়কটিতে দেখা যায়, সাতরাস্তা থেকে তেঁজগাও রেল গেইট পর্যন্ত আনিসুল হক সড়কের দুই পাশে সারি সারি করে রাখা হয়েছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। সড়কে এক সারিতে ট্রাক রাখার পর আর জায়গা না থাকায় দ্বিতীয় সারি বানিয়েও রাখা হচ্ছে ট্রাক। ট্রাকের ভিড়ে তাই স্বাভাবিক নিয়মে চলে না সেই রাস্তায় কোনো গাড়ি। এমনকি সড়কটির ফুটপাত চলে গেছে ট্রাকের দখলে। শুধু সড়কটির মাঝে স্মৃতি হিসেবে আছে সড়কের নাম ফলক।

এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আবুল কাশেম। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “কী ছিল এই সড়কটির, আর এখন কী অবস্থা করা হয়েছে? দেখলেই সবাই অবাক হয়ে যান। এটা কি করে সম্ভব! প্রকাশ্যে দিবালোকে দিনের পর দিন ট্রাকগুলো এখানে অবৈধভাবে রাখা হচ্ছে। যেন এটা আগের মতোই দখল হয়ে গেছে। দিনরাত সার্বক্ষণিক এই সড়কটিতে রাখা হচ্ছে শত শত ট্রাক।

দখল হওয়া সড়ক দিয়ে যাতাযাতকারী স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ক্রমান্বয়ে গজিয়ে ওঠা ট্রাক স্ট্যান্ডের কারণে দিনের বেশির ভাগ সময় এখানে যানজট লেগে থাকে। তার মধ্যে আবার পুরো সড়ক ভরে গেছে ময়লায়। এছাড়া সড়কের দুই পাশে দেয়ালচিত্র ট্রাকের আড়ালে চলে যাওয়ায় সড়কটির সৌন্দর্যও নষ্ট হয়ে গেছে। দ্রুত যদি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে সামনের দিনগুলোতে এ সড়ক ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাবে।”

এদিকে ট্রাক শ্রমিক-মালিকেরা সড়ক দখলের যুক্তি দেখাচ্ছেন আগের মতোই। জসিম নামের এক ট্রাক ড্রাইভার জানান, এখানে ট্রাক পার্ক করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি তিনতলা পার্কিং নির্মাণের কথা। কিন্তু ডিএনসিসি তা না করায় নিরুপায় হয়ে সড়কেই তারা ট্রাক রাখছেন। বিকল্প ব্যবস্থা করলে সড়কে তারা আর ট্রাক রাখবেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ট্রাক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মোহাম্মদ মনির সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ট্রাক স্ট্যান্ডের জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি থাকাকালে তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মেয়র মারা যাওয়ার পর ট্রাক স্ট্যান্ড নিয়ে কেউ কাজ করেননি। আমরা বিকল্প কোনো জায়গা না পেয়ে এখানে গাড়ি রাখতে বাধ্য হচ্ছি।”

তালুকদার মোহাম্মদ মনির আরও বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতে তখনকার রেলমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, রেলের ৩৯ বিঘা জায়গায় ট্রাক স্ট্যান্ড বানিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও তা হচ্ছে না।”

তবে পাশের জায়গায় টার্মিনাল নির্মাণ করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। টার্মিনাল না থাকায় আনিসুল হক সড়কে গাড়ি রাখা হচ্ছেও বলে জানান তিনি।

সড়ক দখল করে ট্রাক রাখা ও স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “টার্মিনাল নির্মাণের জন্য এখানো জায়গা পাওয়া যায়নি। আমরা জায়গা খুঁজছি। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা হচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুত জায়গা নির্ধারণ করা হবে। জায়গা পেলেই দ্রুত সময়ের মধ্য টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।”

ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “সাতরাস্তা থেকে রেলগেট সড়ক দখল বন্ধ করতে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযান শেষে আবার দখল করছে তারা। এই সড়কটি দখলমুক্ত রাখতে সিটি করপোরেশনের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই।”

সাতরাস্তা থেকে রেললাইন পর্যন্ত সড়কে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বহু বছরের ট্রাক স্ট্যান্ডটি ২০১৫ সালে উচ্ছেদ করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনিসুল হক। যে কারণে সেসময় বিক্ষুব্ধ চালক ও শ্রমিকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। হতে হয় অবরুদ্ধ। তখন দখলদারদের ইটপাটকেল আর পুলিশের টিয়ারশেলের মধ্য দিয়ে সড়কটিকে ‘পার্কিংমুক্ত’ করে সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেন মেয়র আনিসুল হক। পরে রাস্তাটির সংস্কার করে আরও প্রশস্ত করেন। তার সময়ে ঢাকার সব চেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সড়ক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আনিসুল হকের মৃত্যুর পর থেকে ফের দখলদারদের হাতে চলে যায় সড়কটি।

Link copied!