• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৩, ১০:২৬ পিএম
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড

দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়েছে চলতি বছর। এ বছর ডেঙ্গুতে অতীতের মৃত্যুর সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে প্রথম ৯ মাসেই। এ সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৪ জন। আক্রান্তের পর সারা দেশে মারা গেছে ৫৩৭ জন। আক্রান্তের মধ্যে মোট মৃত্যু হার ০.৫ শতাংশ।

এদিকে এ বছর ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে বেশি আক্রান্ত হলেও মৃত্যু সংখ্যা ঢাকায় বেশি। এখন পর্যন্ত ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩ হাজার ৪৮৯ জন এবং মৃত্যু বরণ করেছেন ৩৯৭ জন। এছাড়া ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ হাজার ৬৯৫ জন এবং মৃত্যু বরণ করেছেন ১৪৭ জন। মোট আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ পুরুষ ও নারী ৩৮ শতাংশ।

  • মৃত্যু বেশি ঢাকায়, আক্রান্ত বাইরের জেলাগুলোতে
  • ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৬২ শতাংশ পুরুষ, নারী ৩৮ শতাংশ
  • ডেঙ্গু নিয়ে সিটি করপোরেশনের গাফিলতি রয়েছে : ডা. লেলিন চৌধুরী
  • মশা দমনে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা কারও জানা নেই : ডা. মুশতাক হোসেন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৫৪৭ জন মৃতের মধ্যে নারী ৩১০ জন ও পুরুষ ২২৭ জন। এর মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে ৬৭ জন। গত ৫৭ দিনে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৪৯০ জন। এতে গড়ে দৈনিক মৃত্যুর হার ৯ জন। গত বছর দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এদিকে সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। সেসময় মারা গেছে ১৭৯ জন। ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২৮ হাজার ৪২৯ এবং ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২ জন। আর চলতি বছর শুধু আগস্টে আক্রান্ত হয়েছে ৬০ হাজার ৩৫২ জন।

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে ২০০ শয্যার ডেঙ্গু ওয়ার্ড বরাদ্দ থাকলেও জুলাই ও আগস্টে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ সময় হাসপাতালটিতে চিকিৎসা দিতে হিমশিমে খেতে হয়েছে চিকিৎসক ও নার্সদের। নির্ধারিত শয্যা ছাড়িয়ে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হয়েছে মেঝেতে ও বারান্দায়। এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৪৬৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, মারা গেছেন ৯৫ জন।

এদিকে দিন দিন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় মুগদা হাসপাতালের মতো রাজধানীর অন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের বেশ চাপ পড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। এখানেও প্রায় ১৫০টি শয্যা বরাদ্দ রাখা হয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য। কিন্তু অতিরিক্ত রোগীর চাপে ডেঙ্গু ওয়ার্ড ছাড়িয়ে অন্য ওয়ার্ডেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা যায়। শিশু হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ৯৬৯ জন শিশু ভর্তি হয়েছে, মারা গেছে ১৩ শিশু।

ঢাকার দুই সিটির তৎপরতা  
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) চলতি অর্থ বছরে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ১১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগের অর্থ-বছরে এ খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মশা নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, তারা মশক নিধনের পাশাপাশি বাসা-বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে অভিযানের পরিচালনা করছে। প্রতিদিন দুই সিটিতে ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রেড জোনভিত্তিক এলাকাগুলোতে চালানো হচ্ছে বিশেষ অভিযান। সেখানে সকাল-বিকেল দুই বেলা এডিসের লার্ভা ধংসে ছিটানো হচ্ছে ওষুধ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতামত  
ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া চিন্তিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ঢাকায় বসবাসরত নাগরিকরাও মশার ব্যাপারে সচেতন নন। ঢাকার বাসা-বাড়িতে ছাদবাগান প্রথা চালু হয়েছে। বাড়ির ছাদে নানা ফুল-ফলের বাগান করা হচ্ছে। অথচ ওই সব বাগানের টবে পানি জমে এডিসের লার্ভার প্রজনন ক্ষেত্র গড়ে তোলা হয়েছে। এসব বিষয়ে নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

ডা. লেলিন চৌধুরী আরও বলেন, এডিস মশা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। সাধারণত অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু রোগীর আক্রান্তের হার কমতে থাকে, এবার তার ব্যতিক্রম হয়েছে। জুলাই ও আগস্ট মাসেই সর্বাধিক আক্রান্ত ও মৃত্যু। কারণ এবার জুলাই থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিতে এডিস মশার বিস্তার হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনেরও কিছুটা গাফিলতি রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেনের মতে, ডেঙ্গু রোগটি নিয়ে বড় ধরনের গবেষণা, নজরদারি নেই। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের তথ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে আসছে। কিন্তু এর বাইরেও যে বিপুল মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, ঘরে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের তথ্য কোথাও নেই।

তিনি আরও বলেন, শহরে গ্রামে পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া, পানি জমে যাওয়া, নগরায়ণের ফলে পানি আটকে থাকার কারণে ডেঙ্গু মশা বেড়েছে। ফলে রোগীও বেড়ে গেছে। মশা দমনেও দেশ জুড়ে বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি এখন মশা দমনে যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোর কার্যকারিতা আছে কিনা, তাও কারও জানা নেই।

Link copied!