• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ফলের বাজারেও সিন্ডিকেট : অভিযোগ ক্রেতার


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩, ০৫:৪২ পিএম
ফলের বাজারেও সিন্ডিকেট : অভিযোগ ক্রেতার
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি ফলের দোকান। ছবি-সংবাদ প্রকাশ

ফলের বাজারেও এবার সিন্ডিকেটের ছোবল পড়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তাদের ভাষ্য, ডলার আর এলসি খোলার সংকটের অজুহাত দেখিয়ে উচ্চমূল্যে ফল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।  তারা সরকারের কোনো পদক্ষেপকেই তোয়াক্কা করছে না? বাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই বলে জানান এসব ক্রেতারা।

মো. রাজিব শেখ থাকেন রাজধানীর উত্তরায়। গত এক মাসে ফলের বাজারে গিয়েছেন মাত্র একবার। কারণ ফলের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন তিনি। মাস শেষে যা অর্থ পান তা দিয়ে মাস চওেল না। সংসার নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় তাকে। পরিবারে পুষ্টির চাহিদা রয়েছে। তবে উচ্চমূল্যের বাজারে ফলের চাহিদা মেটানোর সাধ্য নেই। এসব কারণে বাজারের তালিকা ছোট করতে হয়েছে তাকে।

সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে কথা হয় মো. রাজিব শেখের। তিনি বলেন, “পরশুদিন বাজারে গিয়েছিলাম কিছু ফল কিনতে। এমনিই তো বেতন দিয়ে সংসার চালানো যায় না। তবু পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে ফল না কিনলে চলে না। সন্তানরা কান্নাকাটি করে। বাজারে গিয়ে দেখি “লাল আঙুরের দাম ৪৫০ টাকা কেজি। দাম শুনে অবাক হয়েছি। অথচ কয়েক মাস আগেও দেখেছি এই আঙুর ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে বাজার ব্যবস্থাপনায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা এখন অসহায়। ইচ্ছে করলেই সন্তানদের ফল কিনে খাওয়াতে পারি না।”

তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছর ৭ লাখ টন ফল আসে। এরপর দেশি ফলের ফলন ভালো। তা দিয়েও নিজ দেশে চাহিদা মেটানো সম্ভব।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, দেশের বাজারে ৬০-৬৫ শতাংশ ফল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। কয়েক বছর আগে দেশে ফলের বাজার ছিল আমদানি নির্ভর। তবে ডলার সংকটের পাশাপাশি কাস্টমস শুল্ক হার বাড়িয়ে দেওয়ায় এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা ইচ্ছে মতো দাম ধরে দিচ্ছেন।

রাজধানীর কয়েকটি ফলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, আপেল প্রতি কেজি আকারভেদে ২৫০-৩০০ টাকা, লাল আঙুর ৩০০-৪৫০ টাকা, কমলা ১৫০-২২০ টাকা, নাশপাতি ২৫০ টাকা, আনার ৩০০-৪০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারী ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের দাবি, শুল্ক বেড়ে যাওয়া এবং ঋণপত্র খোলার জটিলতায় এক বছরে ফলের আমদানি কমে গেছে ৪০ শতাংশ। আর দাম বৃদ্ধিতে বিক্রি কমেছে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়াও চট্টগ্রামে ফলের দাম বেশি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আজ প্রতি কেজি কমলায় ৫০ টাকা বেশি। আপেলে ৩০ টাকা বেশি। আমরা আড়ত থেকে বেশি দামে ফল কিনে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে।”

এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, “পাইকারীতে ২০০ টাকায় প্রতি কেজি আপেল কিনতে হয়েছে আমাদের। তাহলে আমরা কত টাকা বিক্রি করবো। গত এক মাস ধরেই অধিকাংশ বিদেশি ফলের দামই বেশি। এখানে আমাদের করার কিছু নেই। শুনেছি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিদেশি ফল আনলোড করতে আগের চেয়ে খরচ বেড়েছে।”

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, “পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদেশি ফল দেশে আসছে না। ফলে দাম একটু বেশি। শীত মৌসুম হওয়ায় বাংলাদেশি ফলও নেই। আমদানি করা ফল যদি বেশি পরিমাণে আসত, তাহলে দাম এমনিতেই কমে যেত। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা আগের মতো আমদানিও করতে পারছেন না। যে কারণে পাইকারি এবং খুচরা উভয় দিকেই বিক্রি কমেছে। সাধারণ মানুষ এখন আগের মতো ফল কিনে না।”

ফল ব্যবসায়ীদের এই নেতা আরও বলেন, “বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এলসি ছাড়তে হবে। ডলার সংকট দূর করতে হবে। তবেই আমদানি স্বাভাবিক হবে।”

Link copied!