• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ভাগ্য বিড়ম্বনায় স্কুলে যাওয়া হয় না মেরাজের


বিজন কুমার
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৩, ১০:০০ পিএম
ভাগ্য বিড়ম্বনায় স্কুলে যাওয়া হয় না মেরাজের
ছবি : সংবাদ প্রকাশ

শরীরে সাদা রঙের চেক শার্ট আর নীল রঙের জিন্স প্যান্ট। পায়ের জুতাগুলোতে লাল-কালো রং মিশ্রিত। এক হাতে ব্যাগভর্তি দাঁত মাজার ব্রাশ, আরেক হাতে ক্রেতাকে আকর্ষণ করাতে দুটো ব্রাশের নমুনা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন চত্বরের ভেতরে এমন বেশভূষায় দেখা মেলে একটি শিশুর। বয়স তার ১৫ পেরিয়েছে।

বুলি আওড়িয়ে সে বলছে, “ছোটদের ব্রাশ ৩০ টাকা, একজোড়ার দাম একটু কম।”

এভাবেই স্টেশন চত্বরে বসে থাকা যাত্রীদের কাছে গিয়ে ডেকে ডেকে ব্রাশ বিক্রি করছে সে। কিছুক্ষণ পর চোখ ফেরাতে দেখা গেল, একটি ব্রাশও বিক্রি হলো না শিশুটির। তবু সে যাত্রীদের লক্ষ্য করে ব্রাশ বিক্রির চেষ্টা করছে।

একপর্যায়ে কথা হয় শিশুটির সঙ্গে। সে জানায়, তার নাম মেরাজ। রাজধানীর বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরের পার্শ্ববর্তী এলাকার মামুন-নিমা দম্পতির ছেলে সে। মা গৃহিণী আর বাবা তার মতোই একই কাজ করেন।

আলাপচারিতায় চোখভর্তি ঘুম আর বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে সে সংবাদ প্রকাশকে বলে, “আগে সুঁই বিক্রি করতাম। তারপরে রাতে পড়ালেখা করতাম। ছোট ভাই গত একমাস আগে অ্যাক্সিডেন্ট (দুর্ঘটনার শিকার) করেছে। তাই আর স্কুলে যাওয়া হয় না। ভাই সুস্থ হলে, নতুন বছরে মা আবার স্কুলে ভর্তি করে দেবে। তারপর পড়ালেখা শুরু করব।”

শিশুটি আরও বলে, “আজকে তেমন বিক্রি হয়নি। ২ থেকে ৩শ’ টাকা বিক্রি হয়েছে। কোনো কোনো দিন ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফিরে ঘুমাব। অনেক ঘুম পেয়েছে।”  

মুক্ত পাখির মতো হেসে-খেলে বেড়ে ওঠার কথা মেরাজের, থাকার কথা বইয়ের টেবিলে, অথচ নিয়তিই শিশু মেরাজকে দাঁত মাজার ব্রাশ নিয়ে ফেরিওয়ালার কাজ করতে বাধ্য করেছে।

মেরাজের সঙ্গে আলাপকালে অপেক্ষমাণ কিছু যাত্রীদের কথা কানে ভেসে আসতে থাকে। অনেকেই বলছেন, “অনেকে শিশু নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। সেইস্থলে মেরাজ আয় করছে। বিষয়টি মন্দ নয়, ভালো।”

আরিফ নামের এক যাত্রী বলেন, “আমাদের সমাজে অনেক শিশু আছে, যাদের ইচ্ছা থাকলেও পড়াশোনা করতে পারছে না। এসব শিশুদের প্রতি একটু নজর দিলে দেশে শিক্ষিত মানুষ তৈরি হবে। যা দেশের জন্য মঙ্গলকর।”

Link copied!