• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

যোগাযোগের নতুন যুগে ঢাকা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৩, ০৫:১৪ পিএম
যোগাযোগের নতুন যুগে ঢাকা
ফাইল ছবি

অভুতপূর্ব প্রসার ঘটছে মেগাসিটি ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই উদ্বোধন করা হবে নতুন মাইলফলকের কয়েকটি মেগাপ্রকল্প। এরমধ্যে রয়েছে- ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন-৩ এবং শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে খুলে দেওয়া হবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উল্লেখযোগ্য একটি বড় অংশ। এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসটি বিমানবন্দর থেকে কুড়িল, মহাখালী, তেজগাঁও হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার বিস্তৃত। এটি রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোর বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। ফলে কমে আসবে যানজট, আর বাঁচবে সময়।

অন্যদিকে, এমআরটি লাইন-৬ অক্টোবরেই উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মুহাম্মদ মফিদুর রহমানের ঘোষণা অনুযায়ী  জানা যায়, একই সময়ে উদ্বোধন হবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক এলাকা।

এছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গাজীপুরের সঙ্গে বিমানবন্দরের সংযোগকারী বিআরটির পুরো ২০.৫ কিলোমিটার অংশ সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যেই চালু হবে।
রাজধানী ঢাকা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য দেশের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণে এক কেন্দ্রস্থল। জিডিপিতে এই অঞ্চলের বিশেষ অবদান রয়েছে। যা প্রায় ৩৬ শতাংশ।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, ঢাকার জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৫০ হাজার। কিন্তু এর সড়কের ঘনত্ব মাত্র ৬.১২ কিলোমিটার।

অন্যদিকে, বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি মাত্র ৬.৪ কিলোমিটার। যা হাঁটার গতির চেয়ে সামান্য বেশি। যানজটের কারণে ঢাকায় বছরে আর্থিক ক্ষতি হয় ৩.৮ বিলিয়ন ডলার। 
সর্বোপরি এই অঞ্চলের বিশাল আর্থিক ক্ষতি ব্যাপক প্রভাব ফেলছে দেশের অর্থনীতিতে। এ থেকে উত্তরণে বর্তমান সরকার এই মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন শুরু করে। বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রকল্পগুলো একই সময়ে শুরু হলে পাল্টে যাবে রাজধানী ঢাকার চিত্র। যানজটের নগরীতে যোগাযোগে আসবে প্রশান্তির নতুন মাত্রা।

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ডা. হাদিউজ্জামান বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে চলমান বেশকিছু প্রকল্প সহসা উদ্বোধন হবে শুনেছি। এটা ভালো খবর। ঢাকা শহরে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি ট্রিপ দেওয়া হয়। এজন্য গণপরিবহন ব্যবস্থাই কার্যকর সমাধান। বিআরটি ও এমআরটি প্রকল্পগুলো চালু হলে যানজটের সংকট দূর হবে।”

এমআরটি-৬ এ দৈনিক যাত্রী ৫ লাখ:
এদিকে, কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ অনুসারে জানা যায়, ঢাকার , মেট্রোরেল লাইনের কাজ শেষ হবার পর প্রতিদিন ৫০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন -৬ এর প্রতিদিন যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা ৫ লাখ। এমআরটি লাইন-৬ এর কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক। 

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা ২০২৪ সালের মধ্যেই এমরআরটি লাইন পুরোদমে চালু করতে চাই। তবে ডেডলাইনের আগেই পুরো সেবা চালু করতে পারলে খুশি হবো।”

তার মতে, মেট্রোলাইন যাতায়াতে সময় কমিয়ে আনবে। ফলে সার্বিক যোগাযোগে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। আয় ও সামগ্রিক জীবন যাত্রার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে।

অতিসম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, চলতি বছরের অক্টোবরে এমআরটির আরো তিনটি স্টেশন- ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিলে চালু হবে। এরপর বিজয়স্মরণী কারওয়ানবাজার, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনগুলো চালু হবে।

মন্ত্রী আরো জানান, এমআরটি লাইন-৬ এর সামগ্রিক কাজ ৯৫.৩৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। উত্তরা নর্থ থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ শতভাগ এবং আগারগাঁও মতিঝিল অংশের কাজ ৯৫.২৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, রোলিং স্টক ও ডিপো সরঞ্জামের কাজ  ৯০.২৪ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির পরিচালক মুহাম্মদ ছিদ্দিক গণমাধ্যমকে বলেন, “প্রকল্পটির লক্ষ্য বছরে ২ লাখ ২ হাজার ৭৬২ টন কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে ঢাকাকে রক্ষা করা।” 
জানা যায়, বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে সময় লাগে ১০৫ মিনিট, মেট্রোরেলে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৩৬.৪ মিনিট। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মেট্রোরেলের প্রবেশ ও প্রস্থানের পথ নির্মাণে সময় বেশি লাগার কারণে কিছু স্টেশন খুলতে দেরি হতে পারে।

এই প্রকল্পে যারা বেশি লাভবান হবে:
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, “বিনিয়োগ ও পুঁজি  ফ্রেন্ডলিনেসের দিকে না তাকিয়ে যেগুলোতে অন্তর্ভুক্তি বাড়াবে সেদিকে নজর দেওয়া উচিৎ।”

তিনি আরো বলেন, “মেট্রোরেল আধুনিক পরিবহন হলেও এর সুবিধাভোগী মূলত মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এছাড়া মেট্রো সিস্টেমের কার্যকারিতা অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থা ও শহরের হাঁটার কার্যকারিতার ওপরই নির্ভর করে বলে ইল্লেখ করেন তিনি। পথচারি বান্ধব পরিবেশ ও দক্ষ সার্কুলার বাস না থাকলে মেট্রোরেলের সুফল সীমিত হয়ে যেতে পারে।”

চাপ কমবে বিমানবন্দর সড়কে:
ঢাকার প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে কুড়িল থেকে বনানী মহাখালী, সাতরাস্তা-মগবাজার, রেল করিডর, খিলগাও-কমলাপুর, সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী ও কুতুবখালীজুড়ে বিস্তৃত থাকবে। এক্সপ্রেসওয়েটির দৈর্ঘ ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। 
এই প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্য ঢাকা ময়মনসিং মহাসড়ককে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করে উত্তর দক্ষিণ করিডরে যানজট মুক্ত করা। এই প্রকল্পটির প্রথম ধাপের বিশেষ অংশটি প্রায় ১১ কিলোমিটার। এটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে।

ভোগান্তি কমবে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের:
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, বিআরটি লাইন-৩ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত বিশেষায়িত বাস সার্ভিস সেপ্টেম্বরে চালু হবে। যা উত্তরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করবে।

ঢাকা বিআরটি কোম্পানি জানিয়েছে, প্রকল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। এই প্রকল্পটি চালু হলে উল্লেখযোগ্য হারে সময় বাঁচবে। এই লাইন প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ যাত্রীকে সেবা দিতে পারবে।

Link copied!