• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৯ সফর ১৪৪৬

মৌচাকে গাড়ির ভেতরে লাশ: ঘটনায় নতুন মোড়


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ১০:১৪ এএম
মৌচাকে গাড়ির ভেতরে লাশ: ঘটনায় নতুন মোড়
মোহাম্মদ মিজান ও জাকির হোসেন

রাজধানীর মৌচাকে বেসরকারি ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পার্কিংয়ে একটি প্রাইভেট কার থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় প্রায় ৩২ ঘণ্টার তিনটি সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে পুলিশ। ফুটেজে এই সময়ের মধ্যে পার্কিংয়ে থাকা ওই গাড়ির কাছে বাইরে থেকে কাউকে যেতে দেখা যায়নি। আবার গাড়ি থেকেও কাউকে বের হতে দেখা যায়নি বলে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সোমবার দুপুরে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা একটি প্রাইভেট কার থেকে জাকির (২৪) ও মিজান (৩৮) নামে দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে রমনা থানা-পুলিশ। দুজনেরই শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে গিয়েছিল। তাদের হত্যা করা হয়েছে, নাকি অন্য কোনো কারণে মৃত্যু হয়েছে, এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি।

পরদিন মঙ্গলবার এ ঘটনায় গাড়ির চালক জাকিরের বাবা আবু তাহের বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। রমনা-থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে।

প্রাইভেট কারটির মালিক জোবায়ের আল মাহমুদের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায়। তিনি জানান, তিন মাস ধরে জাকির তার গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। গত শনিবার এই গাড়িতে করে জোবায়ের তার স্ত্রীর বড় ভাইকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে ঢাকায় যান। এ সময় গাড়িতে জাকিরের সঙ্গে তার বন্ধু মিজানও ওঠেন। মিজান তার প্রতিবেশী এক শিশুকে হাসপাতালটি থেকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন। রোববার ভোরে বিমানবন্দর থেকে তারা গাড়ি নিয়ে হাসপাতালটিতে পৌঁছান। এরপর মিজান তাকে মালিবাগ থেকে নোয়াখালীর একটি বাসে তুলে দেন। বিদায় দেওয়ার সময় জাকির বলেছিলেন, বেলা ১১টার দিকে রোগীকে ছাড়পত্র দেবে, ততক্ষণ তারা দুজন গাড়িতেই ঘুমাবেন। কিন্তু বেলা পৌনে ১১টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি জাকিরকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও পাননি। সোমবার দুপুরে তাদের লাশ উদ্ধার হয়।
 
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পার্কিংয়ে থাকা দুটি এবং হাসপাতালের সামনের অংশে থাকা একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফুটেজে দেখা যায়, রোববার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে গাড়িটি পার্কিংয়ে প্রবেশ করে। তারপর আর বের হয়নি। এই সময়ের মধ্যে ওই গাড়ির কাছে বাইরে থেকে কাউকে যেতেও দেখা যায়নি। পরে লাশ উদ্ধারের সময় পরীক্ষা–নিরীক্ষায় দেখা যায় অনেক সময় ধরে চালু থাকার কারণে গাড়ির গ্যাস শেষ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি ব্যাটারির চার্জও শেষ হয়ে গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িটি থেকে প্রচুর পরিমাণ গ্যাস বের হয়ে কার্বন মনোঅক্সাইড তৈরি হয়। আবার দীর্ঘ সময় এসি চালু থাকায় সেখান থেকেও অতিমাত্রায় কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস বের হয়ে থাকতে পারে। এই গ্যাস শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে তাঁদের শরীরে প্রবেশ করে তাঁদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। আর দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ির মধ্যে বদ্ধ অবস্থায় থাকার কারণে গরমে এক দিনেই তাদের শরীর অস্বাভাবিক ফুলে যায়। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে তাঁরা ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন।

কর্মকর্তারা আরও বলছেন, গাড়ির মধ্যে বিষাক্ত কার্বন মনোঅক্সাইড তৈরি হলে অজান্তেই দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আর সেখানে তো জাকির ও মিজান ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। এ রকম ঘটনা দেশে সেগুনবাগিচা, গাজীপুরসহ কয়েকটি জায়গায় আগেও ঘটেছে। আবার ভারতেও এ ধরনের কয়েকটি কেস স্টাডি তাঁরা পেয়েছেন। ফলে সবকিছু মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় হত্যা বা অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, গাড়ির গ্যাস বের হয়ে সেটি বিষাক্ত মনোঅক্সাইড তৈরি হয়েছিল। সেটি থেকেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এটি প্রাথমিক ধারণা। ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা (ফরেনসিক) রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

এদিকে জাকিরের স্বজনেরা দাবি করেছেন, দালাল চক্রের হাতে খুন হয়েছেন জাকির ও তার বন্ধু মিজান। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য দালালদের ২৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন জাকির। কিন্তু টাকা দেওয়ার আড়াই বছরেও যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেননি তিনি। দালালদের টাকা ফেরত দিতে চাপ দেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।

Link copied!