দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে বিচারিক লড়াইয়ের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি ফিরে পাচ্ছেন। মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
এই মামলায় শুরুতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরাজিত হয়েছিল। পরে রিভিউ থেকে মামলাটি আবার আপিল শুনানিতে আসে। সর্বশেষ মঙ্গলবার শুনানিতে আদালত ৯৮৮ জন কর্মচারীকে চাকরিতে পুনর্বহালের আদেশ দেন।
২০১১ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেকেই চরম দুঃখ-কষ্টে দিন কাটান। কেউ কেউ বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারান। এ সময় কর্মচ্যুতরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চাকরিচ্যুত এসব কর্মচারী পুনর্বহালের দাবি জানান। এর জেরে শুরু হয় আন্দোলন। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে চাকরিচ্যুত ৯৮৮ কর্মচারীর পুনর্বহালের বিষয়ে রিভিউ পিটিশন করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি অনুসরণ করে ২০০৩ ও ২০০৪ সালে বিভিন্ন স্মারকে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রায় এক দশক পর, ২০১১ সালে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ষড়যন্ত্র করে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য আদালতে উপস্থাপন করেন। এতে আদালত বিভ্রান্ত হয়ে এসব নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ওই বছরের একটি সভায় চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত নেয়। যা ছিল সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিক, চাকরিবিধি বহির্ভূত ও অনৈতিক বলে অভিযোগ ওঠে।
২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট সাবেক এমপি ফজলে রাব্বী মিয়া একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন, যাতে এসব নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা চাওয়া হয়। দীর্ঘ শুনানির পর ২০০৬ সালের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট ওই রিট খারিজ করে দেয়।
কিন্তু এর চার বছর পর, গাজীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক হাইকোর্টের ওই আদেশের বিপরীতে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর একটি রিভিউ আবেদন করেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে আদালত ২০১১ সালে কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতির রায় দেন।
রায়ে সেই সিদ্ধান্তের অবসান ঘটল। প্রায় দেড় দশকের বিচারিক লড়াই শেষে ৯৮৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি ফিরে পেলেন। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে তাদের জীবনে নতুন আশার দিগন্ত খুলে দিল।