প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব বাধা-বিপত্তি ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর অগ্রগতির এ ধারা যেন আর কেউ রোধ করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
রোববার (২৮ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
এ সময় বক্তব্যের প্রায় পুরো অংশজুড়েই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সার্বিক প্রেক্ষাপট এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেক রকম ষড়যন্ত্র থাকবে। এসব মাথায় নিয়ে আমাদের চলতে হবে। যতই সমালোচনা হোক, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং করে যাব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে ও এগিয়ে যাবে।”
এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে গ্র্যাজুয়েশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য এটি সম্ভব হয়েছে। জনগণের সার্বিক উন্নয়নে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এ অর্জন আমাদের জন্য অনেক গৌরবের। এটি বাঙালি জাতির বিরল সম্মান ও অনন্য অর্জন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছি বলেই আমরা সফলতা অর্জন করতে পেরেছি। অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সমালোচনায় কান না দিয়ে আমরা অভীষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছি। সঠিক দিক নির্দেশনা নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার কারণে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। এ কাজ আমরা সহজভাবে করতে পেরেছি, তা কিন্তু নয়। এ যাত্রাপথ কখনো সুগম ছিল না। আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, গাড়িতে আগুন, অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল, অবরোধ, এসব কর্মকাণ্ড বিএনপি এখনো প্রত্যাহার করেনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে করেছে। এরপর এই কোভিড-১৯ মহামারিও আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিশ্বের অর্থনীতির চাকা যখন স্থবির, তখন আমরা তা সচল রেখেছি। এর ফলে দেশের অর্থনীতি গতিশীল রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। এ জন্য আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি। এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হতো। জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল- জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ বা বেগম জিয়ার কথা বলেন, তারা তো কেউ দেশকে উন্নত করতে চাননি। ক্ষমতা তাদের কাছে ছিল ভোগের বস্তু ও বিলাসবহুল জীবন। তারা ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দলে টেনে একটি শ্রেণি তৈরি করল। সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ এগিয়ে আসেনি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার কারণে আমরা সুবিধা যেমন পাব, অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশের সুযোগগুলো পাব না। অবশ্য আমরা ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় চেয়ে নিয়েছি, করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। এতে সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধুকন্যা আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “যাদের জন্য বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করলেন, সেই বাঙালি জাতির হাতেই তার জীবন দিতে হলো। সবকিছু জেনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিতার স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি দেশে ফিরে আসি। সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। বারবার আঘাত এসেছে, কিন্তু কেন জানি না আল্লাহ্ রাব্বুল আল-আমিন বারবার বাঁচিয়েছেন। সেবা করার সুযোগ পেয়েছি বলেই একটা মর্যাদায় বাংলাদেশকে উন্নীত করতে পেরেছি।”

































