• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩০, ২০ রমজান ১৪৪৬

কুড়িগ্রামে ২০৩ বাল্যবিয়ে


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১, ০৬:৩০ পিএম
কুড়িগ্রামে ২০৩ বাল্যবিয়ে

উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম দারিদ্র্য আর বাল্যবিয়ে ইস্যুতে বরাবরই থাকে শীর্ষে। নদনদী ও চরের জেলায় বাল্যবিয়ে হয়ে থাকে সব সময়। কিন্তু অতিমারি করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বন্ধ থাকার সময়ে জেলায় ব্যাপকহারে বাল্যবিয়ে হওয়ার তথ্য আসছে।

প্রায় দেড় বছর পর ১২ সেপ্টেম্বর সারা দেশের মত কুড়িগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে খোলার পর থেকে প্রকাশ পাচ্ছে ‘চোখ কপালে’ ওঠার মতো সংখ্যা।

জেলা শিক্ষা অফিস বলছে বিদ্যালয় খোলার পরদিনই জেলার ১০টি বিদ্যালয়ের খবর নেওয়া হয়। তাতে করোনার শুরুতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থেকে গত ১২ সেপ্টেম্বর খোলার মধ্যে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০৩টি ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। এরমধ্যে জেলা সদরের পাঁচটি বিদ্যালয়ের ৬৩টি ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। বিষয়টিকে বড়ই উদ্বেগজনক বলছেন সচেতন মহল।

সারডোব উচ্চ বিদ্যালয় সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের অবস্থিত। বিদ্যালয়টির নবম শ্রেণির ৯ ছাত্রীর মধ্যে আটজনেরই বিয়ে হয়েছে। স্কুল খোলার পর থেকে নবম শ্রেণির একমাত্র ছাত্রী নার্গিস নাহার। সে ছেলে সহপাঠিদের সঙ্গে ক্লাস করছে। কিন্তু আটজনের বিয়ের খবরে নিজের পড়ালেখা নিয়ে তার শঙ্কা কাটছে না। বিদ্যালয়টির দশম শ্রেণির তিন, ষষ্ঠ শ্রেণির এক, সপ্তম শ্রেণীর দুই ও অষ্টম শ্রেণির চারজনের গোপনে বিয়ের খবর পাওয়া গেছে।

নার্গিস জানায়, স্কুল খোলার খবরে স্বস্তি ফিরেছিল তার। দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকার পর পড়ালেখাটা স্বাভাবিক হতে চলেছে জেনে আনন্দে ভাসছিল মন। দীর্ঘদিন পর সহপাঠিদের সঙ্গে দেখা আর ক্লাসের হইহুল্লোড় তো হবেই। সরকারি ঘোষণার পর থেকে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিল স্কুলে গেলেও দেখা মেলেনি বাকি আট ছাত্রীর। পরে একে একে খোঁজ নিয়ে জানা যায় আট জনেরই বিয়ে হয়ে গেছে স্কুল বন্ধের সময়ে। বাকি আছে সে একাই।

নার্গিস বলেন, “স্কুলে অনেক্ষণ থাকার পরও কেউ আসেনি। পরে একজনের সঙ্গে কথা বললে জানতে পাই তাদের বিয়ের খবর। আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়। এমন খবর শুনলে পরিবার থেকে আমাকেও বিয়ে দিতে চাইবে।”

তবে পড়াশুনা শেষ করে বিয়ে করবে বলে পরিবারকে জানানোর কথা জানিয়েছে নার্গিস নাহার।

উদ্বেগে শিক্ষক ও অন্যান্য অভিভাবকরাও। এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীর ৫০ শতাংশ উপস্থিত হয়নি।

সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, “নবম শ্রেণীর ৩৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে নয়জন মেয়ে ছিল। এখন একজন আসছে। খুবই দুঃখজনক বিষয়। বিয়েগুলো গোপনে হওয়ায় জানা যায়নি।”

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফজলে রহমান সরকার বলেন, “বিদ্যালয়ের ২২৫জন শিক্ষার্থী। অর্ধেকের বেশি উপস্থিত হচ্ছে। শিক্ষকরা দলগতভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাশের উত্তর হলোখানা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে বন্ধের মধ্যে।

স্থানীয় সিরাজুল ইসলাম বলেন, “নদীভাঙা এলাকা। মেয়ে বেশি বড় হলে লোকজন আসে না। বেশি পড়ালে বেশি যৌতুক লাগে। এজন্য কম বয়সে বিয়ে দেই মেয়েকে।”

বুলবুলি বেগম বলেন, “মেয়েক মেট্রিক পাশ করালে ছেলে আইএ পাশ খোঁজা লাগে। তখন তো গাড়ি বা টাকা দেওয়া লাগে। কয়জন দিব্যার পায়!”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৪ ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। দেড় বছরের মধ্যে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী বিয়ের পর মা হয়েছেন। তারা সবাই বর্তমানে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত।

কাঁঠালবাড়ি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গোলাম রব্বানী বলেন, “করোনার সময়ে যোগাযোগ কম ছিল। সে কারণে খবরগুলো পরে জানা গেছে। বেশির ভাগ মেয়ের গোপনে দূরে আত্মীয়ের বাড়িতে বিয়েগুলো হয়।”

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মো. মেহেবুব হাসান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে জেলার ১০টি বালিকা বিদ্যালয় থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা গেছে বন্ধের সময় ওই ১০টি প্রতিষ্ঠানে ২০৩ জন মেয়ে বাল্যবিয়ে হয়েছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিয়ের পরিসংখ্যান দ্রুত পাওয়া যাবে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম জানান, সদরের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষণ করে ৬৩ মেয়ের বিয়ের খবর পাওয়া গেছে। যা সত্যিই উদ্বেগজনক।

Link copied!