দুর্গাপূজার যত আনুষ্ঠানিকতা

হিন্দু ধর্মাম্বলীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। দিন কয়েক পরই শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। আকাশে-বাতাসে পুজোর গন্ধ যেন ম ম করছে। হিন্দু ধর্ম অনুসারে, মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন দেবী দুর্গা। এই জন্যেই বিশ্বাস করা হয় এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয়ের প্রতীক।

আশ্বিন মাসে প্রায় দশ দিন ধরে দুর্গা পুজোর উৎসব পালিত হয়। যদিও উৎসব শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন থেকেই। কারণ এদিনই দেবী দুর্গা মর্তে এসেছিলেন বলে যুগ যুগ ধরে বিশ্বাস করেন হিন্দু ধর্মপ্রাণ মানুষেরা।

জাকজমকভাবে এই উৎসব উদযাপনে চলছে প্রস্তুতিও। নানা  পরিকল্পনা, গোছগাছ, খাওয়াদাওয়ার প্রস্তুতি, পুজোর প্রস্তুতি, সময় মতো অঞ্জলি, ভোগ খাওয়া সব কিছুতেই এখন ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী এবং বিজয়া দশমী পালন করা হয়। প্রতিটি দিনই নিজস্ব অর্থ এবং তাৎপর্য রয়েছে। প্রস্তুতির আগেই জেনে নিন কীভাবে পুজোর দিনগুলোর পরিকল্পনা করবেন_

দুর্গাদেবীর আগমনেই শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, মাতৃপক্ষের শুরু হয়। সেদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গা পুজোর সূচনা হয়। কথিত আছে, মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল।

মহালয়া অমাবস্যা তিথি শুরু হবে ৫ অক্টোবর মঙ্গলবার সময়– সন্ধ্যা ৭টা ৩৬ মিনিটে। শেষ হবে  ৬ অক্টোবর বুধবার বিকেল ৫টায়।

এই বছর নবরাত্রি শুরু হবে আগামী ৭ অক্টোবর এবং শেষ হবে ১৫ অক্টোবর। 

৯ অক্টোবর শনিবার পঞ্চমী তিথির শুরুর মধ্য দিয়েই শুরু হবে শারদীয়া দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। ১০ অক্টোবর রোববার পঞ্চমী তিথির শেষ হবে।

ষষ্ঠীর তিথির শুরু হবে ১০ অক্টোবর রোববার রাত ২টা ৪৬ মিনিটে। শেষ হবে ১১ অক্টোবর সোমবার রাত ১২টায়। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, মহাষষ্ঠীর দিন দেবী দুর্গা তার সন্তান সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ এবং কার্তিককে নিয়ে মর্তে অবতরণ করেন। 

এই দিন দুর্গার বোধনের পর সব আচার-অনুষ্ঠান শুরু হয়। পুজো প্যান্ডেল, মন্দির, বনেদিবাড়ি এমনকি যেখানে দুর্গার আরাধনা করা হয়, সবস্থানে  ঢাকের তালে মেতে ওঠেন সবাই। 

মহাসপ্তমীতে মহাপুজো হয়। সপ্তমী তিথির শুরু ১১ অক্টোবর, সোমবার রাত সাড়ে ১২টায়। শেষ হবে ১২ অক্টোবর মঙ্গলবার। রাত ১০টা ১৫ মিনিটে। এই দিন দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন করা হবে। সূর্য ওঠার আগেই, একটি কলাগাছ পবিত্র গঙ্গার পানি স্নান করিয়ে, তারপর একে নববধূর (কলা বউ) মতো নতুন শাড়ি পরানো হয়।  

অষ্টমী তিথির শুরু হবে ১২ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে। শেষ হবে ১৩ অক্টোবর বুধবার। এই দিন শারদীয়া দুর্গাদেবীর মহাষ্টমী বিহিত পূজা, মহাষ্টম্যাদি কল্পারম্ভ (৫ম কল্প) এবং কেবল মহাষ্টমী কল্পারম্ভ প্রসস্তা (ষষ্ঠ কল্প)। বীরাষ্টমী এবং মাষ্টমী ব্রতোপবাস করা হবে।

পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, বিশ্বাস করা হয় যে দেবী দুর্গা মহাঅষ্টমীতে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন।

এই দিন ভক্তেরা পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে দেবীকে আরাধানা করেন।  'কুমারী পূজা' করা হয়। ৯ বছরের কম বয়সী মেয়েরা এই দিন দেবী দূর্গা রূপে পূজিত হন। অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে হয় 'সন্ধি পুজো'। সন্ধি পূজা হবে রাত ৮টা ২০ মিনিটে।

'সন্ধি পূজা' শেষ হলে শুরু হয় মহানবমী। নবমী তিথির শুরু ১৩ অক্টোবর বুধবার রাত ৮ টা ৩৯ মিনিটে। শেষ হবে ১৪ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার রাত ৭টা ২৫ মিনিটে। শারদীয়া নবরাত্রিকা ব্রত সমাপন হবে এই দিনে। নবমীর সন্ধ্যাবেলা, দেবীর 'মহা আরতি' করা হয়।
বিজয়া দশমী দুর্গাপুজোর উৎসবের শেষ দিন। দশমী তিথির শুরু ১৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত ৭টা ২০ মিনিটে। শেষ হবে ১৫ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৩ মিনিটে। পূজা ও বিসর্জন প্রসস্তা, বিজয়া দশমী কৃত্য, কুলচারানুসারে বিসর্জনান্তে অপরাজিতা পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হবে দূর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিমাগুলো বরণ করে হিন্দু মহিলারা 'সিঁদুর খেলাতে' মেতে ওঠেন। জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়ার হয় প্রতিমাগুলো। বিসর্জনের আগে শোভাযাত্রা বের হয়। নাচে- গানে, হাসি মুখে দেবীকে বিদায় জানানো হয়।