শুক্রবার ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এরপর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের সর্বশেষ ধাপে শনিবার দিবাগত রাতে ইরান থেকে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়া হয়েছে ইসরায়েলের দিকে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, ‘ট্রু প্রমিজ থ্রি’ নামে অভিহিত এ হামলার দ্বিতীয় ধাপে মূল লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহর। এতে দুই দেশেই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
এই হামলার পরপরই ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) নিশ্চিত করে যে তারা আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় করেছে এবং তেহরানে ইরানের সামরিক স্থাপনায় পাল্টা বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। আইডিএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের বিমানবাহিনী এই মুহূর্তে তেহরানে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে, একই সঙ্গে আকাশপথে আসা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিহত করার কাজও চলছে।
ইসরায়েলের নাগরিকদের জন্য হোম ফ্রন্ট কমান্ডের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করে বলা হয়েছে, সাইরেন বাজলে সবাইকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হবে এবং না বলা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতে হবে।
দুই দিনের পাল্টাপাল্টি হামলায় ইরানে শতাধিক আর ইসরায়েলে ১৫ জনের বেশি মারা গেছেন। ইরানের হামলায় ইসরায়েলের ৩৫ ব্যক্তি নিখোঁজ। ইসরায়েলের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস জানিয়েছে, দেশের উপকূলীয় এবং উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পড়ে বিভিন্ন আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং খোলা জায়গায় আগুন ধরে গেছে। কয়েকটি জায়গায় ফায়ার সার্ভিস পাঠানো হয়েছে। তেল আবিব, রিশন লে জিওন, এবং হাইফার বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
তবে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ)। সংস্থার মুখপাত্র জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তারা দুটি এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে, তবে এখনো ১০১ হটলাইনে কোনো প্রাণহানির খবর আসেনি।
অন্যদিকে হামলার অভিঘাত ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও। জর্ডানের রাজধানী আম্মানে সাইরেন বাজানো হয়েছে এবং নিরাপত্তার কারণে দেশটির আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এই সংঘাতের সূচনা হয় ইসরায়েলের পক্ষ থেকে চালানো একটি ব্যাপক বিমান হামলার পর, যেখানে ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাসহ কয়েকজন পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। প্রতিশোধ হিসেবে ইরান শুরু করে ‘ট্রু প্রমিজ’ নামে ধারাবাহিক সামরিক অভিযান, যার তৃতীয় ধাপ চলছে বর্তমানে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দ্বন্দ্ব এখন পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যদি না আন্তর্জাতিক মহল দ্রুত হস্তক্ষেপ করে উত্তেজনা প্রশমনে উদ্যোগ না নেয়।