• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই, ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মুহররম ১৪৪৬

৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২২, ০৭:৪২ পিএম
৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি

ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির এই ধাক্কা ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাংকের করা সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এসব উঠে এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে প্রাকৃতিক গ্যাস, গম ও তুলার বৃহৎ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বে এর প্রভাব পড়ছে।

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ পিটার নাগেল বিবিসিকে বলেন, “দ্রব্য মূল্যের বৃদ্ধি বিশ্বজুড়ে ‘অর্থনৈতিক ও মানবিক প্রভাব’ ফেলতে শুরু করেছে। বিশ্বজুড়ে পরিবারগুলোর জীবনযাত্রায় সংকট দেখা দিয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা বিশেষভাবে দরিদ্র পরিবারগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ তারা খাদ্য ও জ্বালানির শক্তির জন্য আয়ের একটি বড় অংশ ব্যয় করে। তাই তারা এই মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।“”

বিশ্বব্যাংক বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্যান্য পণ্যের মতো জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে। জ্বালানির মূল্য সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি হবে ইউরোপে। সেখানে এখন প্রায় দ্বিগুণ দাম দিয়ে তেল গ্যাস কিনতে হচ্ছে। তবে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিশ্বে জ্বালানির কিছুটা কমবে। তখনো প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি দাম দিয়ে জ্বালানি ক্রয় করতে হবে।

১৯৭৩ সালে মধ্যেপ্রাচ্যে উত্তেজনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির চড়া মূল্য ছিল। এপর ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত টানা জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যা গত টানা ২৩ মাস ধরে চলছে।

ব্রেন্ট ক্রুড বলছে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত তেলের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকবে। চলতি বছরে ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছাড়াতে পারে। ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া। বিশ্বের চাহিদার ১১ শতাংশ তেল উৎপাদন করে রাশিয়া। ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে তেলের বাজারে দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নিষেধাজ্ঞার আওয়াতায় থাকা দেশের সঙ্গে অন্য অনেক দেশের ব্যব্যসা বন্ধ হয়ে যায় বা কমে যায়।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ শতাংশ গ্যাসের চাহিদা পূরণ করে রাশিয়া। একইভাবে এই অঞ্চলের ২৩ শতাংশ তেল সরবরাহ করে মস্কো। ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে চাচ্ছে। এতে জ্বালানির দাম বাড়তে সহায়তা করছে।

জাতিসংঘের খাদ্য মূল্য সূচক বলছে, ৬০ বছর আগে বিশ্বে খাদ্য ব্যয় বাড়তে শুরু করে। যা বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্বে খাবার মানুষের খাবার খরচ আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্ভাবাস বলছে, বিশ্বব্যাপী গমের দাম আরো ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। সয়াবিনের দাম বাড়বে ২০ শতাংশ। তেলের দাম বৃদ্ধি পাবে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ। মুরগির দামে ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে রপ্তানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায় এসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে।

এসএন্ডপি গ্লোবালের মতে, যুদ্ধের আগে পর্যন্ত ইউক্রেন ও রাশিয়া বিশ্বের ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ গমের চাহিদা পূরণ করত। এছাড়া বিশ্বের ৬০ শতাংস গম রপ্তানি করত এই দুই দেশ।

যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে শস্য ও তেল বীজের রপ্তানি ৮০ শতাংশের বেশি কমে গেছে।

এছাড়া কৃষি কাজে ব্যব্যহৃত সার, ধাতু, খনিজসহ অন্যান্য কাঁচামালের দামও বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কাঠ, চা ও চালের দাম কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Link copied!