দীর্ঘ জীবন ধরে এক অসমাপ্ত প্রেমের কাহিনিকে বুকে আগলে রেখেছিলেন গায়িকা-অভিনেত্রী সুলক্ষণা পণ্ডিত। মঙ্গলবার মুম্বাইয়ে ৭১ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। আর তাঁর এই মৃত্যু ঘিরে এক বিস্ময়কর কাকতালীয় ঘটনা সামনে এসেছে, ৪০ বছর আগে ঠিক এই দিনে প্রয়াত হয়েছিলেন তাঁর জীবনের একমাত্র প্রেম, অভিনেতা সঞ্জীব কুমার।
দুজন বেঁচে থাকতে সেই প্রেম পূর্ণতা পায়নি, বারবার প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়েও সঞ্জীব কুমারের প্রতি ভালোবাসা কখনো ম্লান হয়নি সুলক্ষণার। সেই একতরফা প্রেমের মর্যাদা রেখেই তিনি আজীবন থেকে যান অবিবাহিত। অবশেষে ভাগ্যের এক অদ্ভুত খেলায়, যে মানুষটির বিরহে তিনি আজীবন কাটালেন, তাঁরই মৃত্যুবার্ষিকীতে পাড়ি দিলেন না–ফেরার দেশে।
সুলক্ষণা ১৯৫৪ সালের ১২ জুলাই ছত্তিশগড়ের রায়গড়ে জন্ম নেন। ৯ বছর বয়সেই শুরু হয়েছিল তাঁর সংগীতযাত্রা। ১৯৬৭ সালে ‘তকদির’ ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তাঁর প্রথম গান ‘সাত সমন্দর পার সে’ তাঁকে রাতারাতি পরিচিতি এনে দেয়। তিনি ধীরে ধীরে জায়গা করে নেন বলিউডের সেরা প্লেব্যাক গায়িকাদের তালিকায়।
১৯৭০ থেকে ১৯৮০। বলিউডের সোনালি দশক। সেই সময়টা লতা-আশার হলেও নিজেকে আলাদাভাবে চিনিয়েছিলেন সুলক্ষণা। ‘তু হি সাগর, তু হি কিনারা’, ‘বন্দী রে’, কিংবা ‘উলঝন’—প্রতিটি গান শ্রোতৃপ্রিয়তা পেয়েছিল। শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করে নায়িকা হিসেবেও জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি।
সুলক্ষণা পণ্ডিতের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় ছিলেন সঞ্জীব কুমার। ১৯৭৫ সালে ‘উলঝন’ ছবির শুটিং চলাকালীন সহ-অভিনেতার প্রেমে পড়েছিলেন সুলক্ষণা। কিন্তু সঞ্জীব তত দিনে অন্য কাউকে হৃদয় দিয়েছিলেন। প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয় সুলক্ষণার। আর সেই প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারেননি অভিনেত্রী, আর কোনো দিন বিয়ে করেননি।
হেমা মালিনীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর থেকেই সঞ্জীব কুমার ও সুলক্ষণা পণ্ডিতের প্রেম নিয়ে গুঞ্জন ছড়ায়। তবে অভিনেতার ‘অ্যান অ্যাক্টরস অ্যাক্টর: দ্য অথরাইজড বায়োগ্রাফি অব সঞ্জীব কুমার’-এর লেখক হানিফ জাভেরি জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক আসলে ছিল না। এটি ছিল একতরফা ভালোবাসা—সুলক্ষণার পক্ষ থেকেই।
ভিকি লালওয়ানিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, হানিফ জাভেরি বলেন, ‘তিনি আগে নূতন, এরপর হেমা মালিনীর সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন। কিন্তু তার পরে আর কেউ ছিল না। সুলক্ষণা তাঁকে বিয়ে করতে চাইতেন, কিন্তু সঞ্জীব আগ্রহী ছিলেন না। সুলক্ষণা তাঁকে মন্দিরে নিয়ে গিয়েছিলেন—যেন সঞ্জীব তাঁর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। কারণ, তিনি জানতেন, তাঁর আয়ু বেশি নেই এবং কাউকে জীবনের ঝুঁকিতে ফেলতে চাননি।’
১৯৮৫ সালে ৪৭ বছর বয়সে মারা যান সঞ্জীব কুমার, এতে ভেঙে পড়েন সুলক্ষণা। এর কিছুদিন পরেই মারা যান তাঁর মা। একের পর এক এই দুই মৃত্যু তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। এর পর থেকেই তিনি ধীরে ধীরে সিনেমা ও আলোঝলমলে দুনিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।
এক সাক্ষাৎকারে সুলক্ষণা বলেছিলেন, ‘এই মৃত্যুগুলো আমার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। আমার স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়েছে। আমি দীর্ঘ সময় ধরে মানসিকভাবে ভেঙে ছিলাম।’
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া



































