• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

শুভ জন্মদিন, কবীর সুমন


হাসান শাওন
প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৩, ০৯:২০ এএম
শুভ জন্মদিন, কবীর সুমন

নিজেকে শনাক্ত করতে গোলকধাঁধা। শিল্পীদের যেন সমস্যা বেশি। তখন কবীর সুমন সহজতম।

“তাদেরই গাইয়ে আমি সাজানো জলসায়।/গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়া। (বাশুরিয়া)”।

১৯৯২ সাল থেকে এই ‘তোমাকে চাই’ স্রষ্টার সকাশে মধ্যবিত্তের বাঙলা গান। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ৭৪ বছরে পা রাখার মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি আলোচিত অথবা সমালোচিত। কিন্তু অনালোচিত নন। তার সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকেন না এমন কেউ নেই। হোক তিনি লাভার্স বা হেটার্স। সুমনের ক্যারিশমা কি এখানেই?
নিকারাগুয়া বিপ্লবের এই দিনলিপিকার বহুভাবে কিংবদন্তি হতে পারতেন। তার কাব্য, অনুবাদকর্ম, ধারা-বর্ণনা ও সাংবাদিকতার গুণেই তা সম্ভব ছিল। কিন্তু সংগীতকে পাঁজরের গভীরতম জায়গায় রেখে তার কলকাতায় ফেরা। এখনো সেই কলকাতায় আছেন। আষ্টেপৃষ্ঠে আছেন বাংলা সংগীতে। সর্বশেষ সৃষ্টি বাংলা খেয়াল নিয়ে নিরীক্ষায় সারাবেলা।

শুধুমাত্র একটা গিটার নিয়ে বুক চিতিয়ে বাংলা গান গাওয়া সম্ভব তা প্রমাণ করে সুমন পথ প্রদর্শক বহু প্রজন্মের। বাংলা গান মানে চলতে থাকা যুগ যুগের ‘আমি’ ‘তুমি’ আর না। সমস্বরে গাওয়া গীতেই তার সংগীত হয়েছে সর্বজনের। 
অনাবিস্কৃত এমন লিরিক শুনে মিডিয়া সমানে বসিয়েছে ‘জীবনমুখী’ গান তকমা। কিন্তু ‘মরব দেখে বিশ্বজুড়ে যৌথ খামার’-এর অপেক্ষায় থাকা সুমন কখনোই বিশ্বাস করেন না ‘জীবনমুখী’ গান বলে আলাদা কিছুর অস্তিত্ব।

পিট সিগারের সঙ্গে গান গাওয়া বিশ্ব নাগরিক এক কবীর সুমন ধরায় না এলে আমরা জীবন নিয়ন্ত্রণকারী রাজনীতি বুঝতাম না। আর তা কোনো গুরুপাচ্য মাধ্যমে নয়। সবার বোঝা গানের ভাষায় চিন্তার বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন এই মায়েস্ত্রো। বাচ্চাদের কেন বসে আঁকতে হবে? তিতুমীরের নামে কেন ব্যারিকেডে নেই? বিচার হলে কেন হয় না গান শুনানি? ভোটের সকালে লজ্জিত কেন শুধু ক্রিকেট ব্যাট? বেহুলা কেন বাংলার রীতি মেনে কখনো বিধবা হন না?—এমন বহু প্রশ্ন ছুঁড়ে নিজেই এর উত্তর দিয়েছেন সুমন।

বিক্ষোভে, বিপ্লবে তাকে চাই। তখন তিনি গ্রেনেড হয়ে ওঠার সক্ষমতা রাখেন। আবার ‘মৌন মুখরতা’য় তিনি কোনো কথায় বাঁধা নেই। বাঙলা আধুনিক গানে দশভূজা চরিত্র কি এই কবীর?    

আবার মনে হয় শুধু গানই তো তার ক্ষেত্র নয়। কোন প্রহরে বাঙালির মনোজগত তাকে বাদ দিয়েছিল? ব্যক্তি সুমন কি কম প্রভাবক?

রাজনীতি করে সংসদ সদস্য হয়েছেন। কিন্তু এও যেন সেই ‘যদি ভাবো কিনছো আমায় ভুল ভেবেছো’র ম্যাজিক। হতে পারেননি এবং হতে পারবেনও না মমতা ব্যানার্জির পোষা বুদ্ধিজীবী। তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণে অনেকেই খুশি হতে পারেননি। কবীরের ধর্ম মানুষ ভজন। সুমন তা-ই করে যাচ্ছেন।

একই সঙ্গে জননন্দিত ও বহু লোকও ক্ষুব্ধ সুমনের ওপর। কবীর সুমন কবে বুড়ো হবেন? কবে তার ভীমরতি ধরবে? এ দেখার অপেক্ষায় বহুজন। ৭৪ ছোঁয়ার পর থেকে তাদের নজর থাকবে ৭৫-এর দিকে। কিন্তু আমরা তো কবীরপন্থি। আমরা করবটা কী?

আমরা অপলক বিস্ময় ভরে দেখব, শুনব তাকে। আমৃত্যু এতটুকু ক্লান্ত হব না এই ‘নদীর স্রোতে কূলের জড়তা’ ভাঙার কিংবদন্তির জন্য।

Link copied!