যাদের হাতে বাংলা চলচ্চিত্র ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ঋত্বিক ঘটক। তিনি ছিলেন যুগ সচেতন চলচ্চিত্রকার, গল্পকার, নাট্যকার ও অভিনেতা। দৃশ্যশিল্পের প্রায় সব রূপেই যিনি ছিলেন এক মহামানব। আজ এই কিংবদন্তির ৯৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর এই দিনে ঢাকার জিন্দাবাহার লেনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
চলচ্চিত্রাঙ্গনে উল্কার মতো জ্বলে ওঠা এই শিল্পস্রষ্টা, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মত্ত ছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন। চলচ্চিত্রকে বস্তুনিষ্ঠ ও জীবনঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্রের ফ্রেমে বাঁধতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ঘটিয়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট, জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, টানাপড়েন, জ্বালাময় বেদনাবিধুর জীবনপ্রণালিকে আত্মস্থ করেছেন। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে চলচ্চিত্রকে আঁকড়ে ধরে এ জগতে পদার্পণ করেছেন।
১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর এই দিনে ঢাকার ঋষিকেশ দাশ লেনের বাসায় জন্মগ্রহণ করেন ঋত্বিক কুমার ঘটক। ১৯৪৭-এর দেশ ভাগের পরে তার পরিবার কলকাতায় চলে যায়। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের মর্মবেদনা নিয়ে শরণার্থী হয়ে কলকাতায় চলে যাওয়া—এসব ঘটনাপ্রবাহ ঋত্বিকের জীবন দর্শন নির্মাণে প্রভাবিত করে। যা পরবর্তীকালে তার শিল্প সৃষ্টির মধ্যে ফুটে ওঠে। গল্প-কবিতা লিখে সাহিত্যচর্চায় হাত পাকান ঋত্বিক ঘটক। দেশভাগ তাকে আলোড়িত করেছিল, এই সময়টাতেই কলকাতায় ভারতীয় নাট্য সংঘ আইপিটিএতে জড়িয়ে পড়েন। রাজনীতিতে দীক্ষা নেন, কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআই-তে যোগদান করেন।
একটি সমাজসচেতন ও সংস্কৃতিমনা পরিবারের আবহে বেড়ে ওঠার প্রভাব শৈশব থেকেই তার মননে কর্ষিত হয়েছে শোষিতের দুঃখ-ক্লিষ্ট, যন্ত্রণা। ঋত্বিক ছিলেন সিনেমার বিপ্লবী। তিনি বলতেন, “আমি প্রতি মুহূর্তে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে বুঝাব যে, ইট ইজ নট এন ইমেজিনারি স্টোরি বা আমি আপনাকে সস্তা আনন্দ দিতে আসিনি। প্রতি মুহূর্তে আপনাকে হাতুড়ি মেরে বুঝাব যে, যা দেখছেন তা একটি কল্পিত ঘটনা কিন্তু এর মধ্যে যেটা বুঝাতে চাইছি আমার সেই থিসিসটা বুঝুন। যেটা সম্পূর্ণ সত্যি সেটার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই আমি আপনাকে এলিয়েন্ট করব প্রতি মুহূর্তে। যদি আপনি সচেতন হয়ে উঠেন, ছবি দেখে বাইরের সেই সামাজিক বাধা, দুর্নীতি বদলের কাজে লিপ্ত হয়ে ওঠেন, আমার প্রচেষ্টাকে যদি আপনার মধ্যে চাপিয়ে দিতে পারি তবেই শিল্পী হিসেবে আমার সার্থকতা।”
প্রসঙ্গত, ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণের কারণে তিনি যেমন প্রশংসিত ছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তার নাম বহুল উচ্চারিত। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র নাগরিক, অযান্ত্রিক, বাড়ি থেকে পালিয়ে, মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার, সুবর্ণ রেখা, যুক্তি তক্কো আর গপ্পো, তিতাস একটি নদীর নাম। এছাড়া একাধিক শর্ট ফ্লিম ও তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। তিনি পদ্মশ্রী অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।