• ঢাকা
  • বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২,
  • ২ জমাদিউস সানি, ১৪৪৭

পদোন্নতি এবং গ্রেড উন্নীত হয় শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের— উপেক্ষিত স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী কম্পিউটার অপারেটররা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
পদোন্নতি এবং গ্রেড উন্নীত হয় শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের— উপেক্ষিত স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী কম্পিউটার অপারেটররা

বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসনে সমতা, ন্যায্যতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন নিশ্চিত করার কথা সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দেশের সবচেয়ে বড় প্রশাসনিক কাঠামোর একটি, যেখানে প্রায় সব পদেই সেবা বিস্তৃত, দায়িত্ব জটিল এবং কাজের চাপ ব্যাপক। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই অধিদপ্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে— স্নাতক/স্নাতকোত্তর  ডিগ্রিধারী কম্পিউটার অপারেটরগণ স্পষ্ট বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন।

১. গ্রেড উন্নীতকরণে বৈষম্যের চিত্র

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পদোন্নতি এবং গ্রেড সময়োপযোগীভাবে উন্নীত হয়েছে। উন্নীত গ্রেডের সুবাদে তাদের মর্যাদা, বেতন কাঠামো ও পদোন্নতির পথ সুগম হয়েছে। কিন্তু একই অধিদপ্তরে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী কম্পিউটার অপারেটরগণ দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে স্থবির হয়ে আছেন। তাদের পদোন্নতি এবং গ্রেড পরিবর্তন বা পদ মর্যাদা পুনর্মূল্যায়নের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

২. দায়িত্ব ও কাজের গুরুত্ব অবমূল্যায়িত

কম্পিউটার অপারেটরগণ শুধুমাত্র দাপ্তরিক দায়িত্বই পালন করেন না; তারা দাপ্তরিক ই-মেইল যাচাই ও প্রয়োজনীয সকল পত্রাদি প্রস্তুতপূর্বক যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করেন, প্রাথমিকের বিভিন্ন ওয়েববেইজড সফটওয়্যার দক্ষতার সঙ্গে পরিচালন, স্ব স্ব দপ্তরের ওয়েব পোর্টাল আপডেট, অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুতি, ব্যয় ব্যবস্থাপনা, হিসাবরক্ষণ, বিল প্রস্তুতকরণ, বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ আয়োজন সংক্রান্ত বিল-ভাউচার প্রস্তুত, অডিট সম্পাদনে সহযোগিতা, দাপ্তরিক নোট, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ এবং বহু প্রশাসনিক কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত।

এই দায়িত্বগুলো দক্ষতা, সততা এবং উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা দাবি করে। অথচ তাদের কাজের গুরুত্ব বিবেচনায় গ্রেড উন্নীতকরণ হয়নি— যা সরাসরি দায়িত্ব বনাম মূল্যায়নের অসামঞ্জস্য তৈরি করেছে।

৩. একই শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভিন্ন গ্রেড— কেন?

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অনেক পদেই ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক ডিগ্রি। কিন্তু শিক্ষক, কর্মকর্তা ইত্যাদি পদে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা উচ্চ গ্রেডে উন্নীত হলেও একই স্নাতক ডিগ্রিধারী কম্পিউটার অপারেটরগণ এই সুবিধা পাননি।

এটি স্পষ্টভাবে শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে বৈষম্যের বাস্তব উদাহরণ।

৪. মনোবল ভেঙে যাওয়া ও প্রশাসনিক ক্ষতি

যখন একই অধিদপ্তরে সমমানের যোগ্যতা ও সমান দায়িত্ব পালনকারীর পদোন্নতি এবং গ্রেড উন্নীত হয়, আর কেউ কেউ উপেক্ষিত থাকেন— তখন সেই কর্মচারীদের কর্মউদ্যম কমে যায়, প্রশাসনিক কাজে অনাগ্রহ তৈরি হয়, আর্থিক কাজে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক কর্মদক্ষতা ব্যাহত হয়।

কারণ আর্থিক ও দাপ্তরিক কাজের সুরক্ষা এবং স্বচ্ছতা নির্ভর করে এই কর্মচারীদের ওপর।

৫. ন্যায্য সমাধান: পদোন্নতি ও গ্রেড উন্নীতকরণ এখন সময়ের দাবি

এই বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজন—

স্নাতক ডিগ্রিধারী কম্পিউটার অপারেটরগণের দ্রুত পদোন্নতি/গ্রেড উন্নীতকরণ, পদমর্যাদা ও দাপ্তরিক দায়িত্ব অনুযায়ী গ্রেড পুনর্বিন্যাস,

সমান শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান গ্রেড নির্ধারণ, দীর্ঘমেয়াদি পদোন্নতি কাঠামো প্রণয়ন, দাপ্তরিক গুরুত্ব, কাজের চাপ এবং প্রশাসনিক অবদান মূল্যায়ন করে ন্যায্য স্বীকৃতি প্রদান।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম নিয়ামক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক ভার বহনকারী স্নাতক ডিগ্রিধারী কম্পিউটার অপারেটরগণকে উপেক্ষা করা শুধু অন্যায় নয়, এটি পুরো ব্যবস্থাপনাকেই দুর্বল করে।

শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এই কর্মচারীদেরও ন্যায্য পদোন্নতি এবং গ্রেড উন্নীতকরণ নিশ্চিত করা সময়ের দাবি— যা প্রশাসনিক সমতা, দক্ষতা ও স্বচ্ছতার জন্য অপরিহার্য বলে মনে করি।

লেখক: ফরিদুল ইসলাম

Link copied!